পেটে কাঁচি রেখে সেলাইয়ের ঘটনায় কেউ দোষী নয়, বিদেশেও এমন হয়: তদন্ত কমিটি
পেটে অস্ত্রোপচারের পর সেলাই করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার ২১ মাস পর কাঁচি সদৃশ ছয় ইঞ্চি লম্বা 'অর্টারি ফরসেপ' পাওয়ার ঘটনায় জড়িত কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না করেই তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে গঠিত তদন্ত কমিটি।
সোমবার ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমানের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পরিচালক নিজেই।
তিনি জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য কে দায়ী, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। এ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়নি। সেখানে বিদেশি কয়েকটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে এজাতীয় ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে ভবিষ্যতে অস্ত্রোপচারের সময় অধিক সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তদন্ত রিপোর্টে।
এদিকে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা এই তদন্ত প্রতিবেদনকে একটি দায়সারা গোছের প্রতিবেদন বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বাইরের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের উপর জোর দিয়েছেন। যাতে ডাক্তার, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের নাম থাকা উচিত ছিলো বলে তারা মনে করেন।
এ ঘটনায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল হাসানকে প্রধান করে গত ১২ ডিসেম্বর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন গাইনি বিভাগের অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা ও সার্জারি বিভাগের মো. কামরুজ্জামান। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিলো।
হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, "প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য কে দায়ী, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। এ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২০ সালের ৩ মার্চ সার্জারি ইউনিট-২-এর দায়িত্বে নিয়োজিত সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোল্লা মো. শরফুদ্দিনের অধীনে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে আরও তিন থেকে চারজন চিকিৎসক অংশ নেন। তবে কার গাফিলতিতে এ ঘটনা ঘটেছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন জার্নালের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়, এজাতীয় ঘটনা অপ্রতুল নয়। এমন নয় যে এটিই প্রথম ঘটেছে। এর আগেও বিভিন্ন দেশে অস্ত্রোপচারের সময় এধরনের ঘটনা ঘটেছে।"
পরিচালক বলেন, "বিদেশি কয়েকটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে এ জাতীয় ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে ভবিষ্যতে অস্ত্রোপচারের সময় অধিক সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।"
সাইফুর রহমান বলেন, "মনিরা খাতুন এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তবে আর কত দিন ভর্তি থাকতে হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।"
প্রসঙ্গত, মনিরা খাতুন (১৮) গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের বাসিন্দা খাইরুল মিয়ার মেয়ে। ২০২০ সালের মার্চে তিনি মেজিনট্রিক ফিস্ট (রক্তের দলা) জনিত সমস্যা নিয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর ৩ মার্চ সার্জারি বিভাগ ইউনিট টু-তে এ সমস্যার জন্য তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকদের অজ্ঞাতসারে অস্ত্রোপচারের কাজে ব্যবহৃত ছয় ইঞ্চি লম্বা অর্টারি ফরসেপ পেটের ভেতরে রেখে সেলাই করা হয়। এরপর থেকেই অসুস্থ ছিলো মনিরা। পরে ৯ ডিসেম্বর মুকসুদপুর উপজেলার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করার পর তার পেটে কাঁচি দেখতে পাওয়া যায়। এরপর তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত ১১ ডিসেম্বর হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে মনিরা খাতুন নামে ওই ১৮ বছরের তরুণীর পেট থেকে ওই কাঁচি বের করা হয়।