নৌ বাহিনীর আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে 'বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান-২০১৯ আলফা ও ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২১ ব্রাভো ব্যাচ' এর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ও বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির উত্তরোত্তর উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি।
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৪৪ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অফিসার বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কমিশন্ড পদে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "কর্মজীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে তোমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তোমাদের মনে রাখতে হবে, যে কঠোর প্রশিক্ষণ তোমরা শেষ করলে তা তোমাদের উৎকর্ষ অর্জনের সূচনা মাত্র। সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে তোমাদের সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে।"
বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর অর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, "বাংলাদেশ নৌ বাহিনী আজ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, দক্ষ এবং পেশাদার বাহিনী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ সকলক্ষেত্রে তাদের আত্মত্যাগ ও কর্তব্যনিষ্ঠা বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে বিরল সম্মান ও মর্যাদা, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।"
করোনা মহামারির সময় বাংলাদেশ নৌ বাহিনীসহ দেশের সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় তাদেরকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, "সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী একাডেমি প্রতিষ্ঠা ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত 'বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স' উদ্বোধন করা হয়ছে।"
"এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমে নেভাল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ সুবিধা আজ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরিতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ইতোমধ্যে একাডেমিতে স্মল আর্মস ফায়ারিং, মোটর ড্রাইভিং এবং ব্রীজ সিমুলেটর স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই বর্ধিত সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নৌ কর্মকর্তাগণ অধিকতর আত্মবিশ্বাসী হয়ে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে নৌ বাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস," যোগ করেন তিনি।
দেশের নৌ বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার নৌ বাহিনীর আধুনিকায়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সে সময় আমরা বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করি।"
তিনি আরও বলেন, "২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আমরা জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে 'ফোর্সেস গোল-২০৩০' প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়ন শুরু করি। নৌ বাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ও আঞ্চলিক শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সরকার বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নৌ বহরে যুদ্ধজাহাজ সংযোজন এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বান্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যেই আমরা বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট এবং সাবমেরিনসহ আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজিত করেছি।"
"আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে চাই যে, ২০১৭ সালে নৌ বহরে 'বানৌজা নবযাত্রা' এবং 'বানৌজা জয়যাত্রা' নামক দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে একটি সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক নৌ বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি," যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, গত নভেম্বর জার্মানী হতে নতুন একটি এমপিএ বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর এভিয়েশন উইং এ যুক্ত হয়েছে এবং অপরটি আগামী মে ২০২২ যুক্ত হবে। হেলিকপ্টার এবং এমপিএ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত দ্বিতীয় হ্যাঙ্গার এর নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে।