আশুলিয়ায় নো ওয়ার্ক, নো পে'র ভিত্তিতে বন্ধ থাকা সময়ের মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ, ১২ শ্রমিক আটক
ঢাকার আশুলিয়ায় সম্প্রতি শ্রমিক অসন্তোষ চলাকালে যে কয়দিন কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছিল, সেই কয়েকদিনের মজুরি প্রদানের দাবিতে কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে আশুলিয়ার কাঠগড়া আমতলা বাজার এলাকায় অবস্থিত ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করেন।
শ্রমিকরা জানান, সম্প্রতি শ্রমিক আন্দোলনের সময় প্রথম দিকে কারখানাটির পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলেও একপর্যায়ে এ কারখানার শ্রমিকরাও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
পরে গত ১১ সেপ্টেম্বর তারা মোট ১৮ দফা দাবি উত্থাপন করে কারখানার অভ্যন্তরে আন্দোলন শুরু করলে কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় নো ওয়ার্ক, নো পে'র ভিত্তিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে, যা ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় কারখানাটিতে কার্যক্রম চালু হয়।
তারা আরও জানান, কারখানা চালু হওয়ার পর গত ৯ই অক্টোবর কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করলেও প্রত্যেক শ্রমিকের বেতন থেকে বন্ধ থাকা সময়ের মজুরি বাদ দিয়ে বেতন পরিশোধ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছেইন অ্যাপারেলসের এক শ্রমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমার বেতন ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু, আমি পেয়েছি ৯ হাজার টাকা। ৫ হাজার টাকা কম দেওয়া হয়েছে। একইসাথে হাজিরা বোনাসের ৫০০ টাকাও দেওয়া হয়নি। সবার ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এসব কারণে আজ আমরা বকেয়া টাকা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করি। সকাল ১০টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলার পর কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সাথে আলোচনা শুরু করে। তারা পরে এ টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানান। কিন্তু শ্রমিকরা আজই টাকা পরিশোধের দাবি জানান।'
তিনি আরও বলেন, 'একপর্যায়ে মালিকপক্ষের কিছু লোকজন শ্রমিকদের মারধর শুরু করে। সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারখানার ভেতরে গিয়ে ২০-২৫ জন শ্রমিককে আটক করে গাড়িতে ওঠায়। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক এর প্রতিবাদ জানালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করে। পরে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।'
আরেক শ্রমিক বলেন, 'আন্দোলনের সময় অনেক কারখানাই ১৩(১) ধারায় বন্ধ ছিল। কিন্তু তাদের শ্রমিকরাও পুরো মাসের বেতন পেয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ টাকা কেটে রেখেছে, যেটি আর কোথাও হয়নি।'
সার্বিক বিষয়ে জানতে ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মিল হুসাইনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম চারজন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সেইসঙ্গে তিনি জানান, পৃথক ঘটনায় একই এলাকার আরেকটি কারখানার আরও আট শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।
১২ শ্রমিক আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'যৌথবাহিনী ১২ জন শ্রমিককে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।'