গাজীপুরের তাজউদ্দীন হাসপাতালে আবারও লিফট দুর্ঘটনায় রোগীর স্বজনের মৃত্যু
গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবারও লিফট দুর্ঘটনায় এক রোগীর স্বজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এর আগে গত মে মাসে লিফট থেকে পড়ে গিয়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল।
দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন মো. জাহিদুল ইসলাম (৪০) নামে এক ব্যক্তি। তিনি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি এলাকার বাসিন্দা। তিনি তার অসুস্থ শিশু সন্তানকে হাসপাতালের ১০ম তলায় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করান। কয়েকদিন ধরে তার সন্তান সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।
নিহতের স্বজন ও অন্যান্য রোগীরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালটিতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা চরম আকার ধারণ করেছে। লিফট পরিচালনার জন্য লিফটম্যান নিয়োগ থাকলেও তাদেরকে কখনোই পাওয়া যায় না। এর আগেও লিফট আটকে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। এখানে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে, এসব দেখার বা প্রতিকারের কোন উদ্যোগ নেই।
স্বজন ও হাসপাতালের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, জাহিদুল কয়েকদিন আগে তার অসুস্থ শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। তার শিশু সন্তানকে হাসপাতালের ১০ম তলায় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি ও তার স্ত্রী থেকে শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে জরুরি প্রয়োজনে ওয়ার্ড থেকে নিচে নামার জন্য তিনি ১০ তলায় লিফটের সামনে এসে লিফট কল করেন। কল করার পর সাথে সাথে লিফটের দরজা খুলে যায়। তখন তিনি লিফটে ওঠার জন্য দরজার ভিতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু তখন লিফট না আসায় তিনি ১০ তলা থেকে নিচে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাদের অভিযোগ, ওই লিফটটি নাকি নষ্ট ছিল, কিন্তু লিফটের সামনে কোন সতর্কবার্তা বা লিফটম্যানও ছিল না। এই লিফটিতে গত কয়েকদিন ধরে সমস্যা থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি এবং কাউকে সর্তকও করেনি। তাদের দাবি, যদি লিফটি নষ্ট হওয়ার কারণে বন্ধ থাকত বা লিফটম্যান উপস্থিত থাকতো তাহলে হয়ত দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্য আইয়ুব হোসেন বলেন, "খবর পেয়ে আমরাও এসেছিলাম। পরে লিফটের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে জাহিদুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। লিফটের সমস্যা এটা আগে থেকে সবাইকে সতর্ক করা উচিত ছিল।"
শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা নিহতের পাশের বেডের আকাশ বলেন, "আমি আর জাহিদ ভাই পাশাপাশি বেডে কয়েকদিন হলো রয়েছি। আমি চা খেয়ে ফেরার পথে শুনি লিফটের উপর থেকে তিনি পড়ে গেছেন। তার স্বজনরা চিৎকার করছে। পরে আমরা সবাই দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখি একজন পড়ে গেছে। এখানে কোন লিফটম্যান ছিল না। পরে লিফটম্যানকে ডেকে এনে দরজা খুলে তারপর তাকে উদ্ধার করি। এরমধ্যেই জাহিদ ভাই মারা গেছেন।" তিনি আরও বলেন, "এই লিফটগুলো সমস্যা কয়েকদিন ধরে বলছি কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি।"
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, "আমরা শুনতে পাই লিফটে একজন পড়ে গেছে। পরে লোকজন লিফট হতে একজনকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসেন। পরে মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।"
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. আমিরুল ইসলাম বলেন, "গতকাল রাতে সাড়ে ১১ টার দিকে একজন রোগীর স্বজন লিফট ব্যবহার করতে গিয়ে ১০ তলায় লিফটের বোতাম চাপলে লিফট ছিল ১১ তলায় কিন্তু ১০ তলার গেট খুলে যায়। এ ব্যবস্থায় তিনি লিফটে প্রবেশ করলে নিচে পড়ে যান এবং মারা যান।"
তিনি আরো জানান, এ ঘটনার পর ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) কে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলে, ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালকের প্রতিনিধি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যু), হাসপাতালের সহকারী পরিচালক। কমিটিকে আজকের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী কারো গাফিলতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মমতাজ বেগম নামের এক রোগী ১২ তলা থেকে পড়ে মারা যান। এ ঘটনায়ও তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এমনকি তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেনি।