সিলেট সিটি করপোরেশন: সব কূল হারালেন বিএনপিপন্থী ৭ কাউন্সিলর
গত জুনে অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে দলীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপির ৪৩ নেতা। দলের নির্দেশনা অমান্য করায় তাদের সে সময় আজীবন বহিষ্কার করে বিএনপি। এর মধ্যে সাতজন কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন।
তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণের পর বিপাকে পড়েছেন সিসিকের এই সাত কাউন্সিলর। আগেই দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এই নেতারা এবার জনপ্রতিনিধির পদও হারালেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে সিলেটসহ দেশের ১২ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়।
সিসিক সূত্রে জানা যায়, গত জুনের নির্বাচনে দলীয় সমর্থন ছাড়াই বিএনপির আজীবন বহিষ্কৃত সাত নেতা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ছয়জন এবং এক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। শপথ গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলরদের কাছে তারা কিছুটা কোণঠাসা থাকলেও ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলে যায়।
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সিসিকের আওয়ামী লীগ দলীয় সব মেয়রসহ কাউন্সিলররা আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েও যান। এরপর থেকে সিসিকে প্রভাবশালী হয়ে উঠেন বিএনপিপন্থী কাউন্সিলররা। ৫ আগস্টের পর সিসিকের সকল কর্মকাণ্ডে বিএনপিপন্থী এই কাউন্সিলরদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়, এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণেও ভূমিকা রাখেন। তবে এই ক্ষমতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি; ২৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় সব কাউন্সিলরদের অপসারণ করে।
জানা যায়, গত নির্বাচনে সিসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিকুল হাদী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম মুমিন। ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল বিজয়ী হন। ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রকিব তুহিন। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন। এছাড়া মহানগর মহিলা দলের সহ-সভাপতি মোছা. রুহেনা খানম মুক্তা সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হন।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, "দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি তো দলকে বহিষ্কার করিনি। আমি এখনও বিএনপির কর্মী এবং দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।"
তিনি বলেন, "বহিষ্কার-তিরস্কার এগুলো রাজনীতির অংশ। অতীতে অনেক নেতাকে বিএনপি বহিষ্কার করেছিল, কিন্তু তারা এখন দলের উচ্চপদে আছেন। আমি আশা করি, অতীতের অবদান স্মরণ করে দল আমাকে ফিরিয়ে নেবে।"
শামীম আরও বলেন, "নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম জনগণের চাপে। আমার এলাকার জনগণ আওয়ামী লীগের গুন্ডাতন্ত্র থেকে মুক্তি চাইছিল, তাই তারা আমাকে জোর করে প্রার্থী করে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।"