আশুলিয়ায় শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
ঢাকার সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে আন্দোলনরত একাধিক কারখানার শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে কাউসার হোসেন খাঁন (২৭) নামে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহত কাউসার আশুলিয়ার ম্যাঙ্গো টেক্স লিমিটেডের সুইং অপারেটর সেকশনের সেলাই মেশিন অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মধ্য রতনপুর এলাকায়।
অন্যদিকে গুলিবিদ্ধরা হলেন মো. নাজমুল হোসেন (২৪), মো. রাসেল মিয়া (২০), মো. ওবায়দুল মোল্লা (২৪), নয়ন (২৩) ও হাবীব।
সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. এনামুল হক মিয়া বলেন, 'কাউসার হোসেনকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তার তলপেটের বাম পাশে গুলি লেগেছিল। এছাড়া চিকিৎসাধীন থাকা নয়নের বুকের ডান পাশে গুলি লেগে বেরিয়ে গেছে এবং রাসেলের বুকের মাঝে গুলি লেগে পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আর পেটে একটি গুলি লেগে পেছন দিয়ে বের হয়ে গেছে। তাদের দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।'
গুলির ধরন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, 'ছররা গুলি বা পেলেট যেটা বলে তেমন নয়, এগুলো সরাসরি বুলেট।'
আশুলিয়ার পিএমকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজিম উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সকালে আমাদের এখানে আহত অবস্থায় চার শ্রমিককে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে দুজন ছিল গুলিবিদ্ধ। একজন হাবীব, আরেকজন নাজমুল। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি।'
তিনি জানান, তাদের দুজনই পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এসেছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে মন্ডল নিটওয়্যারের শ্রমিকদের কারখানার ভিতরে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে—এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে শিল্পাঞ্চলের জিরাবো ও তার আশেপাশের কারখানাগুলোতে।
মন্ডল নিটওয়্যারের শ্রমিকদের অভিযোগ- ২২ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন করার পর কারখানাটির ভবন মালিক রাজিব শ্রমিকদের আটকে রেখে মারধর করেছে। এছাড়াও কারখানাটির দুজন শ্রমিক নিখোঁজ বলে আগের দিন অভিযোগ করেছিলেন তারা।
পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাশের টঙ্গাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ন্যাচারাল ডেনিমস, ন্যাচারাল ইন্ডিগো, ম্যাঙ্গো টেক্স লিমিটেডসহ আশেপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা মন্ডল নিটওয়্যারের শ্রমিকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মুখোমুখি হলে জিরাবো এলাকায় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।
সুমন নামে ন্যাচারাল ডেনিম কারখানার এক শ্রমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মুখোমুখি হলে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা টিয়ার শেল ও গুলি করা শুরু করে।'
তিনি জানান, সংঘর্ষে ন্যাচারাল ডেনিম, ন্যাচারাল ইন্ডিগো এবং ও নিটওয়্যারের অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ দুজনকে তিনি নিজে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন বলেও জানান।
আজ বিকেলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহতের তথ্য পেয়েছি, আমরা হাসপাতালে এসেছি।'
এ ব্যাপারে জানতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শিল্প পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
এক ক্ষুদেবার্তায় শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম জানান, তিনি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ন্যাচারাল ডেনিম কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এইচআর) সবুজ হাওলাদার বলেন, 'আমাদের কারখানায় কোনো সমস্যা ছিল না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছিল। হঠাৎ শ্রমিকদের কাছে গুজব আসে যে মন্ডল গার্মেন্টসের এক শ্রমিক মারা গেছে। এটা শুনেই সব শ্রমিক একসাথে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে চলে যায়। পরে সেখানে কী ঘটেছে, আমি জানি না।'
এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিক নিহতের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।