পলিথিনের বিকল্প পণ্যের চাহিদা বেড়েছে, সরকারি প্রণোদনা চান উৎপাদকরা
সরকারি সিদ্ধন্ত অনুযায়ী, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপগুলোতে এবং ১ নভেম্বর থেকে দেশের সকল কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ঘোষণার পর থেকেই পলিথিন ব্যাগের বিকল্প পণ্য, যেমন— পাট ও কাগজের ব্যাগের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ।
তবে বায়োপ্লাস্টিক, পাট, কাগজের ব্যাগ উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় সুপারশপসহ ক্রেতা পর্যায়ে এ সকল ব্যাগ ক্রয়ে অনীহা রয়েছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, সরকারি সহায়তা পেলে এবং উৎপাদন বাড়াতে পারলে খরচ কমে আসবে।
প্লাস্টিকের বিকল্প বায়োপ্লাস্টিক নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান 'শাল্বৃক্ষ' এর স্বত্বাধিকারী মাহবুব সুমন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা মূলত ব্যাগ, ব্যানারসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প বায়োপ্লাস্টিকের রোল তৈরি করি— এটি ব্যবহার করে ক্রেতারা তাদের পছন্দমতো ব্যাগ, ব্যানার তৈরি করে থাকেন। আমরা গত এক সপ্তাহে প্রায় ২৩ লাখ টাকার অর্ডার পেয়েছি; বিগত এক বছরেও এত পাইনি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা এখন পর্যন্ত বড় অ্যামাউন্টের পণ্য সরবরাহের মেশিনারিজ নিয়ে কাজ শুরু করতে পারিনি। এরজন্য অন্তত আমাদের প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন।"
"সরকার যদি আমাদের প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করে, তাহলে পলিথিন–প্লাস্টিকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না। আমরা এখন অনেক অর্ডারই নিতে পারছি না, কারণ গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের সরবরাহের সক্ষমতা নেই," যোগ করেন তিনি।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প পণ্যের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলায় শালবৃক্ষের মতো ২৪টি বিভিন্ন উদ্যোক্তা–প্রতিষ্ঠানের স্টলে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প পণ্য প্রদর্শন করা হয়।
বাণিজ্য আন্তর্জাতিক নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক নাজমা আরা পারভিন টিবিএসকে বলেন, "সুপারশপগুলো সস্তায় পাটের 'প্লাস্টিক' থেকে তৈরি 'সোনালি ব্যাগ' নিতে চায়, কিন্তু আমাদের উৎপাদনের সক্ষমতা কম, তাই উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। এক একটি ব্যাগ ১২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, কিন্তু প্লাস্টিকের সেই পলিথিন পাওয়া যাচ্ছে ১ টাকারও কম মূল্যে। সোনালী ব্যাগের উৎপাদন বৃহদাকারে করতে পারলে উৎপাদন খরচ অর্ধেকেরও কমে চলে আসবে। এজন্য আমাদের সরকারি সাবসিডি দরকার।"
তিনি বলেন, "এই পণ্যগুলোও যেন বড় বড় ব্যবসায়ীদের হাতে চলে না যায়— সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা এসএমই উদ্যোক্তা আছেন, তাদের মাধ্যমে অঞ্চলভিক্তিক কাজ দেওয়া হোক। নিজ নিজ এলাকার উৎপাদকদের থেকে সুপারশপ, বাজারগুলো এসব বিকল্প প্রডাক্ট সংগ্রহ করুক।"
প্রভা অরণ্যের বিধান চন্দ্র পাল টিবিএসকে বলেন, "পাটের ১০০ টাকার একটি ব্যাগ অন্তত ১০০ বার ব্যবহার করা যায়। কিন্তু আমরা ব্যাগ ক্যারি করতে চাই না, এটাকে আমাদের অভ্যাসে নিয়ে আসতে হবে।"
"আমরা মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহারের তালিকা করেছি। সে অনুযায়ী, প্রডাক্ট তৈরি করছি এবং সম্প্রতি আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি। তবে আমাদের বিনিয়োগ যদি বাড়ানো যায়, সেক্ষেত্রে পণ্যের দাম কমানো সম্ভব হবে," যোগ করেন তিনি।
মেলার পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে একটি সেমিনারেরও আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "আইন অনুযায়ী পলিথিন বর্জনের কার্যক্রম ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। শপিং সেন্টার ও দোকান মালিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সচিবালয়কে প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করা হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা কোনো বিষয় চাপিয়ে দেইনি। সুপারশপের মালিকরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়, বরং দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনতেই আমাদের এ কার্যক্রম। সাথে সাথে আমরা আমাদের পাটশিল্প ফিরিয়ে আনতে চাই। পাট বিদেশে রপ্তানি হয়, কিন্তু দেশে এটি অবহেলিত।"
রিজওয়ানা আরও বলেন, "আমাদের আগামী প্রজন্ম, নদী–নালা, মাটি রক্ষার জন্য আমাদের পলিথিন মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।"