আশুলিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভ
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তৈরি পোশাক কারখানা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় এবং ডিওএইচএস-এর সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।
তাদের বিক্ষোভের বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।"
গত ২৭ আগস্ট এক নোটিশের প্রেক্ষিতে, বার্ডস গ্রুপের চারটি কারখানা আর এন আর ফ্যাশনস লি., বার্ডস গার্মেন্টস লি., বার্ডস ফেডরেক্স লি. এবং বার্ডস এ এন্ড জেড লি. ২৮ আগস্ট থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে, বিজিএমই এর সাথে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের বৈঠকে আজকের মধ্যে শ্রমিকদের যাবতীয় আইনগত পাওনাদি পরিশোধের কথা থাকলেও বার্ডস কর্তৃপক্ষ আজ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না বলে জানায়। এতে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পরবর্তীতে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে নোটিশে উল্লেখ করা হয়, "রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশ কিছুদিন যাবৎ কারখানাতে কোন প্রকার কাজ নেই। এর পরেও কারখানা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত ভাবে আর্থিক লোকসানের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছিল। শত চেষ্টা করেও নতুন কোন কাজের অর্ডার সংগ্রহ করা যায়নি, যা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত।"
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বার্ডস গ্রুপ তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার পরে বিষয়টি নিয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে বিজিএমইএ, শ্রমিকসহ সকল পক্ষের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ গ্রুপটির শ্রমিকদের যাবতীয় আইনগত পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল।"
তিনি আরও বলেন, "কিন্তু যতদূর জানতে পেরেছি, বার্ডস কর্তৃপক্ষ আজ শ্রমিকদের সেসব পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন।"
আশুলিয়ায় অধিকাংশ পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে
এদিকে, আজ সকাল থেকে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় অধিকাংশ পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো সারোয়ার আলম।
তিনি বলেন, "আজ পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। লুসাকা গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে এলেও পরে ফিরে গেছে, কোন বিশৃঙ্খলা করেনি। মন্ডল নিটওয়্যারের শ্রমিকরা আছেন।"
শিল্প পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আজ সকাল থেকে অধিকাংশ পোশাক কারখানায় স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ করে বসে আছেন।
সারোয়ার আলম বলেন, "আজ আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় 'নো ওয়ার্ক নো পে'-এর ভিত্তিতে ১১টি, এবং ৭টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে।"
ইন্ডাস্ট্রি সূত্র জানায়, আজ আশুলিয়ায় দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেড কারখানাটি চালু রয়েছে, শ্রমিকরাও কাজ করছেন। মন্ডল নিটওয়্যার খুলে দেওয়া হলেও শ্রমিকরা কাজ করছে না। লুসাকা গ্রুপ আজও ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, জিরাবো রোডে আজ এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা নেই। তবে সাউদার্ন, ডুকাটি এবং মাসকটের একটি ফ্লোরে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। নিউএইজ আজও ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে। এর বাহিরে অন্যান্য এলাকায় সকল কারখানায় কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে
সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে সমস্যায় থাকা কারখানা মালিকদের সাথে বিজিএমইএ'র একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠক থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন কোন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।
ইন্ডাস্ট্রি সুত্র জানায়, আশুলিয়ায় আজ মোট ৩১টি কারখানায় আজ উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় ১২ টি এবং কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ আছে, বা ছুটি আছে এমন কারখানার সংখ্যা ১৯টি।
শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে: তাম্মাম ফ্যাশন লিমিটেড, বেক নিট লিমিটেড, বেক সোয়েটারস লিমিটেড, আঞ্জুমান ডিজাইন লিমিটেড, এনভয় ফ্যাশন লিমিটেড, নিউএজ অ্যাপারেলস, নিউএজ গার্মেন্ট।
কারখানা স্ব-বেতনে ছুটি আছে অথবা কাজ বন্ধ আছে কিংবা শ্রমিকরা চলে গেছে এমন কারখানার মধ্যে রয়েছে: মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড, ম্যাংগটেক্স, ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড, ইন্ডস লিমিটেড, স্কাইলাইন গার্মেন্টস লিমিটেড, স্কাইলাইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, জেনেরশন নেক্সট লিমিটেড ১৬, ন্যাচারাল ডেনিমস, ন্যাচারাল ইন্ডিগো।
সূত্রটি জানায়, আশুলিয়া এলাকায় ২৬৭৮টি কারখানা (৯৮.৫২ শতাংশ) আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি ৪টি কারখানা (১.৪৮ শতাংশ)।
সূত্রটি আরও জানায়, সাভার, আশুলিয়া ও জিরানি এলাকায় আজ ৪০৭টি পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। গাজীপুরে খোলা রয়েছে ৮৭৬টি কারখানা, বন্ধ আছে ১টি।
নারায়ণগঞ্জে খোলা রয়েছে ২০৯টি পোশাক কারখানা, ডিএমপি এলাকায় ৩০২টি এবং চট্টগ্রামে ৩৫০টি। এই তিন অঞ্চলে কোন কারখানা বন্ধ নেই।