পরিবেশবান্ধব, স্বল্প খরচ: সোনালী ব্যাগ কারখানা ও বৈদ্যুতিক বাস কেনার প্রকল্প দ্রুত অনুমোদন পাচ্ছে
দীর্ঘ দিন ধরে অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ঝুলে থাকা পরিবেশবান্ধব ও স্বল্প খরচের প্রকল্পগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে।
সরকার পরিবর্তনের পর পরিবেশগতভাবে টেকসই দুটি উদ্যোগের দ্রুত অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন—একটি পাটের ব্যাগ তৈরির কারখানা স্থাপন, অপরটি ঢাকায় বৈদ্যুতিক বাস চালু করা।
পরিকল্পনা কমিশন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূ্ত্র জানায়, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট থেকে পরিবেশবান্ধব ও পচনশীল 'সোনালী ব্যাগ' উদ্ভাবন হয় ২০১৬ সালে। ২০১৭ সাল পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করা হয় শপিং ব্যাগটি।
কিন্তু এর পর বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) উদ্যোগের আওতায় সোনালী ব্যাগ উৎপাদনে কারখানা স্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতেই কেটে যায় ছয় বছর। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। তারপর আবার দেড় বছর পরিকল্পনা কমিশনে আটকে থাকে প্রস্তাবটি।
অবশেষে ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির পর্যালোচনার পর প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) কাছে জমা দেওয়া হবে।
সোনালী ব্যাগের আবিষ্কারক করেন মোবারক আহমদ খান। তিনি বর্তমানে বিজেএমসির প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। টিবিএসকে তিনি বলেন, বিগত সরকারের উদ্যোগের ঘাটতি ছিল বলে আবিষ্কারের পর প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে লম্বা সময় লেগেছে।
'এখন অনুমোদন প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে। তবে শেষপর্যন্ত প্রস্তাবিত কারখানটি হবে কি না, তা নিয়েও অশ্চিয়তা রয়েছে,' বলেন তিনি।
মোবারক আহমদ খান আরও বলেন, এ প্রকল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন দেশ সোনালী ব্যাগে আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রয়োজনে বেসরকারিভাবেও এ ব্যাগ উৎপাদন সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তার প্রয়োজন হবে।
বিজেএমসি তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্পে ডেমরায় লতিফ বাওয়ানি জুট মিলসের জায়তায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনালী ব্যাগ উৎপাদনের জন্য পাইলট কারখানার প্রস্তাব করেছে। এ প্রকল্পে সীমিত আকার বাণিজ্যিক উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত কারখানায় বছরে ১ হাজার ৫০০ টন সোনারী ব্যাগ ও পলিথিনের বিকল্প মোড়ক সামগ্রী উৎপাদিত হবে। প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন হবে ৫ টন পলিমার ব্যাগ।
বৈদ্যুতিক বাস
১২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বৈদ্যুতিক বাস কিনতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) প্রকল্পেরও দ্রুত অনুমোদন শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
বিআরটিসির প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৪৯.৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ১২টি বৈদ্যুতিক বাস কেনা হবে। প্রতিটি বাসের মূল্য ধরা হয়েছে ২.৯৫ কোটি টাকা এবং দুটি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮.৪০ কোটি টাকা। এ প্রস্তাব নিয়ে সোমবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ৫০ কোটি টাকার কম ব্যয়ের প্রকল্প মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পর্যায়ে অনুমোদিত হতে পারে, একনেক উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই। মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পর্যায়ে অনুমোদন হয় বলে এসব প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
তারা আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে প্রস্তাব করা বড় আকারের বৈদ্যুতিক বাস প্রকল্পের প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি ছিল পরিকল্পনা কমিশনের।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে কোরিয়ার ঋণে ৩৪০টি বৈদ্যুতিক বাস কেনার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল । ১৪০টি সিএনজিচালিত সিঙ্গেল ডেকার এসি সিটি বাস ও ১৫ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশসহ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭১.৬০ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০০টি সিএনজিচালিত সিঙ্গেল ডেকার এসি ইন্টারসিটি বাস কেনায় খরচ ধরা হয়েছিল ৬৫৯.৬৫ কোটি টাকা। ভারতীয় ঋণে ১০০টি দ্বিতল বৈদ্যুতিক বাস কেনার প্রস্তাবও ছিল।
বিআরটিসির পরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন, বৈদেশিক অর্থায়নের বৈদ্যুতিক বাস কেনার প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো পাইপলাইনে থাকবে।
'বাসের চাহিদা পূরণে সরকারি অর্থায়নের বাস কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিসি,' বলেন তিনি।
বর্তমানে বিআরটিসির বহরে ১ হাজার ৩৫০টি বাস রয়েছে। বিআরটিসি তার বর্তমান বাস বহর দিয়ে জনগণের বিশাল পরিষেবার চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট সক্ষম নয় বলে জানান সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে শীঘ্রই ৮০০ বাসের আয়ুষ্কাল শেষ হবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে আয়ুষ্কালের হিসেবে মোট সচল বাসের সংখ্যা ৫৫০ হবে। তাই নতুন বাস সংগ্রহের পরিকল্পনা করা খুবই জরুরি বলে জানান বিআরটিসির কর্মকর্তারা।
নতুন প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবহন বহরের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বৈদ্যুতিক বহরে রূপান্তরের লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়াও ২০৩০ সালের মধ্যে ডিজেল ও অকটেনচালিত বাস বিশ্বব্যাপী পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে। ২০৩৫ সালের পর অটোমোবাইল উৎপাদনকারীরা আর ডিজেল ইঞ্জিনের গাড়ি তৈরি করবে না। তাই এখনই বিআরটিসির বহরে বৈদ্যুতিক গাড়ি যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তা না হলে হঠাৎ করেই বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে।