শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ড: ৭ দিনে তদন্তের অগ্রগতি কতদূর?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাত দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্তে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যে পুনর্গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। নতুন কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে শাস্তির সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মারধরের ভিডিওতে অনেককে দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত একজনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা পাঁচ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন, যার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করে নতুন মামলা দায়েরের দাবিও রয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টায় শামীম মোল্লাকে মৃত ঘোষণা করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেনকে সভাপতি এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. লুৎফর রহমান আরিফকে সদস্য সচিব করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটিতে আরও সদস্য হিসেবে ছিলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. এমরান জাহান, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন এবং জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম।
কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আরেকটি সংশোধিত অফিস আদেশে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ রেজাউল রকিবকে সদস্য সচিব করা হয়।
সাত সদস্যের নতুন এ কমিটিতে আরও যুক্ত করা হয় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এন এম ফখরুদ্দিন এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল আহসানকে।
তদন্ত কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক তারেক চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'পূর্বের কমিটির প্রধান পদত্যাগ করায় নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল এবং আজ বেশকিছু আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল (২৬ সেপ্টেম্বর) কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে।'
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম জানান, প্রাথমিক প্রতিবেদনের পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আর কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। শীঘ্রই বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
২১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের একাংশ মানববন্ধনে অভিযোগ করেন, তদন্ত কমিটির দুই সদস্য এর আগে শামীম হত্যার বিচারের দাবিতে এক স্বারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। ফলে তারা 'তদন্তে নিরপেক্ষ থাকবেন কি না' তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে মানববন্ধনে ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামান বলেন, শামীম মোল্লা হত্যার বিচার চাওয়া দুজন শিক্ষককে তদন্ত কমিটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা এতে যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করছি।
'বিচারপ্রার্থী যদি বিচারের দায়িত্বে থাকেন, অবশ্যই সেখানে তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,' তিনি বলেন।
আজ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শামীম মোল্লার হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন মামলা দায়েরের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে ছিল সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, নিরাপত্তা অফিসের তালা ভেঙে শামীমকে মারধরের ঘটনার ও পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঘটনার তদন্ত, ঘটনাস্থলে উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীদের বহিষ্কার করা ইত্যাদি।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, শামীমকে একাধিকবার গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। প্রথমে গেইটে এবং পরে নিরাপত্তা সেলের তালা ভেঙে তাকে মারধর করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, 'শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো প্রশাসনিক সভায় আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
এ হত্যাকাণ্ডের মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় সম্পৃক্ততার জেরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেট (প্রান্তিক গেট) এলাকায় একদল শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে গণপিটুনি দেন।
পরে তাকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হলে সেখানে দফা দফায় মারধরের ঘটনা ঘটে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হলে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক শামীমকে মৃত ঘোষণা করেন।