পিকনিকের নামে শিক্ষার্থীদের আদালতে নিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ানোর অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের পাচুড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পিকনিকের নামে আদালতে নিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনা জানাজানি হলে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
স্থানীয়রা জানান, পিকনিকের জন্য বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে তিনটি বাস ভাড়া করে শিক্ষার্থীদের পাবনা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ পিকনিক হওয়ার কথা ছিল পাবনার রানা ইকো পার্কে।
কিন্তু প্রধান শিক্ষক বাসের গন্তব্য পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান পাবনা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। সেখানে শিক্ষার্থীদেরকে একটি ইভটিজিং মামলায় সাক্ষ্য দিতে হয়।
জানা গেছে, কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক আদালতে জবানবন্দি দিতে বলেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, কয়েক মাস আগে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্তের ঘটনায় একটি মামলা করেন। সোমবার ছিল ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ।
দীর্ঘসময় আদালতে থাকার কারণে এ সময় শিক্ষার্থীদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং ভয়ে অভিভাবকদের ফোন করে বিষয়টি জানায়।
এ ঘটনায় সন্ধ্যায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অভিভাবক ও শিক্ষকপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে।
একজন অভিভাবক শফিকুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে পিকনিকে যাবে বলে দুইশ' টাকা চাঁদা নেয়া হয়, কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন, তাদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
'আজ [সোমবার] দুপুরে ওরা পিকনিকে যাওয়ার পরে জানতে পারলাম হেডমাস্টার ছেলেমেয়েদের পাবনা কোর্টে নিয়ে গেছেন। আমিতো বিষয়টি জানার পরে শঙ্কায় পড়ে যাই,' বলেন তিনি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যালয়ের মেয়েদের ইভটিজিং করার ঘটনায় কয়েকমাস আগে চাটমোহর থানায় তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
'বর্তমানে অভিযোগটি পাবনা কোর্টে বিচারাধীন। সে মামলায় সোমবার ১৫ জন মেয়ের আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের তারিখ ধার্য ছিল,' বলেন তিনি।
'পাবনায় মেয়েদের সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি সকল ছাত্রছাত্রীরা জানার পরে তারাও তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে পাবনা কোর্টে যেতে চায়,' আরও বলেন জাহাঙ্গীর আলম।
শিক্ষার্থীরা নিজেরাই পিকনিকের জন্য টাকা তুলেছে এবং আয়োজন করেছে দাবি করে তিনি বলেন, 'আমি শুধু পিকনিক স্পটে যাওয়ার আগে আদালতে কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে গিয়ে সাক্ষ্য প্রদান করিয়েছি।'
বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আগেই জানানো হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
আদালত থেকে পরে শিক্ষার্থীদের পিকনিকের জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মগরেব আলী বলেন, কোর্টে সাক্ষ্য প্রদানের কথা বলে সকল শিক্ষার্থীকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া কাজটি ঠিক হয়নি। 'অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'
পাচুড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিমও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।