জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যায় জড়িত কে?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে মারধরের পরে মারা গেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা।
গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। টিবিএসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: কামাল হোসেন।
শামীম আহমেদকে মারধরের বেশকিছু ভিডিও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হাতে এসেছে।
এক ভিডিওতে দেখা যায় নিরাপত্তা শাখায় আটক অবস্থায় একজন লাঠি দিয়ে শামীম আহমেদকে সজোরে আঘাত করছেন। মারধরকারী ওই ব্যক্তি রাজু আহমেদ। রাজু সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক ছাত্র। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত।
ভিন্ন আরেক ভিডিওতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক লাবিব আহসানকে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেইট (প্রান্তিক গেইট) এলাকায় শামীমকে আটকের পর লাবিব আহসান সেখানে উপস্থিত ছিল। এসময় অপর একজনকে মাটিতে পরে থাকা শামীমকে লাথি দিতে দেখা যায়। তবে তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
এ বিষয়ে লাবিব আহসান বলেন, শামীম মোল্লাকে আটক করার পর অনেকে আমাকে ফোন দেয়। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি সে ১৫ তারিখের হামলায় ছিল কিনা। পরে তাকে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করা হলে আমি ইবনে সিনা হাসপাতালে যাই, এবং রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে ফিরে আসি।
তবে রাজু আহমেদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ হলে– তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারাই জড়িত থাকুক না কেন, আমরা তাকে বিচারের মুখোমুখি করব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রকে যতটুকু সহায়তা করা যায় আমরা করব।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এই মারধরের নেতৃত্ব দেন জাবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ভূঁইয়া। প্রক্টর অফিসের সামনে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজু হাসান রাজন ও ইংরেজি বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হামিদু্ল্লাহ সালমানকে মারধর করতে দেখা যায়। তারা উভয়ে ছাত্রদলের কর্মী। এবিষয়ে জানতে চেয়ে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মারধরের সাথে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের যুক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মারধরকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় আমার জানা নেই। তবে আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। ফুটেজ থেকে আমরা জড়িতদের খুঁজে বের করব।"
এ ঘটনায় কোন তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। দ্রুত আমরা কাজ শুরু করব।"
হত্যাকাণ্ড নিয়ে রহস্য
গণপিটুনির পর ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মারধরের পর শামীমকে রাত সাড়ে আটটার দিকে আশুলিয়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। চিকিৎসার জন্য পুলিশ তাকে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সেলিমুজ্জামান সুজন বলেন, "তাকে রাত সোয়া নয়টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমরা পরীক্ষা করে জানতে পারি– উনি মারা গেছেন। মূলত উনি আগেই মারা গিয়েছিলেন। কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া যাবে।"
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মারধরের পর শামীমকে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করলে– পরে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে পুলিশের গাড়িতে নেওয়ার সময়– তিনি স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গাড়িতে ওঠেন। সেই সময় তাকে দেখে গুরুতর আহত মনে হয়নি।
গণপিটুনিতে মৃত্যুর বিষয়টিকে 'অস্বাভাবিক' উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, "১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষার্থীরা আটকের পর মারধর করে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়। আমরা আশুলিয়া থানায় অবহিত করলে পুলিশের একটি টিম আসে। এসময় তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এরপর পুলিশে সোপর্দ করলে তিনি নিজে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। তখন তাকে দেখে আশংকাজনক মনে হয়নি। পরবর্তীতে পুলিশের গাড়িতে মৃত্যুর বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। বিষয়টি ভালোভাবে না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না।"
আজ শামীম আহমেদ হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে আরিফ সোহেল বলেন, শামীম মোল্লাকে মারধর করে পুলিশে দেওয়া হলে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। মারধরের পর জিজ্ঞাসাবাদের সময় শামীম মোল্লা কিছু মানুষের নাম বলেছেন। সেই নামগুলো কাদের ছিল; আরও কার কার নাম বলতে পারতো; কার কার নাম বলতে পারে নাই? তিনি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তার সাথে জড়িত ক্যাম্পাসের কিছু নাম তিনি বলেছেন। তাকে মারলে কার লাভ হতো, কার ক্ষতি হতো; এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে।