নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৌমিত্র, হাসিনার সাবেক এপিএসসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগ করা ভিসি অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস-২ (সহকারী একান্ত সচিব) গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে– ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে বহু শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি; অর্থের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ; ঠিকাদার কর্তৃক জামানতকৃত টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে রুপালী ব্যাংকে স্থানান্তর করে প্রতি কোটিতে ৫০ হাজার টাকা করে কমিশন গ্রহণ এবং গাড়ির জ্বালানি বাবদ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। শেরপুরে গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি।
এছাড়া ঢাকার ধানমন্ডি ও উত্তরায় একাধিক ফ্ল্যাট এবং শেরপুরে জমি কিনেছেন। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু-ও দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।
তার স্ত্রীর নামে রামদিয়া কাশিয়ানীতে মেসার্স রাফি এগ্রো এন্ড ফিসারিজ এর নামে বিভিন্ন মৌজায় কয়েক শত বিঘা জমি ও মোহাম্মদপুর মধুসিটিতে ৬ নম্বর রোডে ৫৮৩ নম্বর বাড়ির এ-৬নং ফ্ল্যাট ক্রয়; ঢাকার উত্তরায় ১৭ নম্বর সেক্টরে ৩ নম্বর রোডে ৪৬ নম্বর সরকারি প্লট অবৈধভাবে বরাদ্দ নেয়া হয়।
পাশাপাশি গোপালগঞ্জে পৌরসভায় ১০ শতক জমি কিনেছেন, পৈত্রিক জমিতে নির্মাণ করেছেন ৫ তলা বাড়ি। তার শ্যালকের নামে ৬ তলা বাড়ি, ১০ তলা কর্মাশিয়াল ও আবাসিক ভবন, ঢাকার মোহাম্মদপুরে মধুসিটিতে ১ বিঘার জমির ওপর ৬ তলা ভবন নির্মাণ, কুয়াকাটার লাইট হাউজের পাশে ওশান ব্লু রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়াও নামে-বেনামে নিজ ও বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে বিপুল সম্পদ রয়েছে লিকুর। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে।
অনুসন্ধানের আওতাধীন অপর ব্যক্তি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় ছিল ১৫ হাজার টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা। নিজ নামে রয়েছে দুটি দামি গাড়ি। এরমধ্যে একটি প্রাডো জিপ যার দাম ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার স্টেশনওয়াগন যার মূল্য ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত দেখিয়েছেন ৪ একর জমি, নিজ নামে বরাদ্দকৃত রাজউকের ৩ কাঠার প্লট, ১৪ গন্ডা অকৃষি জমি, ৪ কাঠার প্লট। এছাড়া, চকবাজার সুপার মার্কেটে তার দোকান রয়েছে। সাবেক এমপি মোস্তাফিজুরের স্ত্রীর নামে ৫ তলা বাড়ি, ঢাকার কাফরুলের ১,৮৭২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে।
এছাড়া নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি ও তার আত্মীয়-স্বজন বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন মর্মে সূত্রের মাধ্যমে জেনেছে দুদক। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বর্হিভূত সম্পদ রয়েছে বলে জানা যায়।
এই তিনজনের দুর্নীতির বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানান দুদক কর্মকর্তারা।