কক্সবাজার সৈকতে নারী পর্যটকদের মারধর ও হয়রানি করা যুবক ডিবি হেফাজতে
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নারী পর্যটকদের মারধর ও হয়রানির করার তিনটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজে দেখা মেলা এবং মারধর ও হয়রানি ঘটনার সাথে জড়িত থাকা মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম (২৩) নামের এক যুবককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়। তিনি কক্সবাজারে পরিবারের সঙ্গে থাকেন।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কস্থ ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে অভিযুক্ত যুবককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানান জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ।
জাবেদ মাহমুদ বলেন, "সৈকতে নারী পর্যটককে মারধর ও নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে পুলিশ ফুটেজগুলো দেখে ঐ যুবককে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। শুক্রবার রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় সদর থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে।"
অভিযুক্ত ফারুকুল ইসলাম বর্তমানে সদর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এক নারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস করাচ্ছে একদল অতিউৎসাহী জনতা। তাদের তোপের মুখে পড়া ঐ ভুক্তভোগী নারী কানে হাত দিয়ে ওঠবস করতে অপারগতা প্রকাশ করলে সেখানে উপস্থিত ফারুকুল ইসলাম (পরবর্তীতে ভিডিও দেখে শনাক্ত করা হয়) লাঠি দিয়ে ঐ নারীকে একাধিকবার আঘাত করেন। লাঠির আঘাত থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগী নারী কান ধরে ওঠবস করেন।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা এক তরুণীকে লাঠি হাতে নিয়ে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ঐ তরুণীর পরিচয় এবং কি কাজে রাতে সৈকতে একা অবস্থান করছেন জানতে চান। পরে তরুণীটি ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি। এক পর্যায়ে যুবকেরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই তরুণীকে চলে যেতে বাধ্য করেন।
আরেকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে একজন ভুক্তভোগী তরুণী সাধারণ পোষাকে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ ও নিজের তথ্য দিচ্ছেন। এসময় কয়েকজন পুলিশের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন যুবকের উপস্থিতি ভিডিওতে দেখা যায়। নিজেকে পর্যটক বলে পরিচয় দেন ঐ তরুণী। এক পর্যায়ে পুলিশ বক্সে প্রবেশ করেন আগের ভিডিওগুলোতে থাকা যুবকটি।
এসময় ঐ তরুণী যুবকে দেখিয়ে বলছিলেন, "উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলিট করে দেবো।"
এদিকে, ভুক্তভোগী নারীদের বিরুদ্ধে 'সৈকতের উন্মুক্ত পরিবেশে বেহায়াপনা আচরণের জন্য এমন অবস্থান' নিয়েছেন বলে ভিডিও ফুটেজে ফারুকুল ইসলামকে বলতে শোনা গেছে।
তার ফেইসবুক আইডি থেকে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকায় ভাসমান যৌন কর্মীদের লাঠি নিয়ে তাড়িয়ে মারধর করার একটি ভিডিও ফুটেজ আপলোড করেছিলেন তিনি।
অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ফারুকুলকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক বলে দাবি করেছেন। তবে কক্সবাজারের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এ দাবি অস্বীকার করেছেন।
কক্সবাজারের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, "আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এতে কেউ নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না।"