ভারত থেকে আমদানির পরও কমেনি ডিমের দাম
দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ডিম আমদানির উদ্যোগের কোনো প্রভাব এখনও দেশের বাজারে পড়েনি। ভারত থেকে ডিম আমদানি হলেও দাম আগের মতোই রয়েছে, বর্তমানে খুচরা বাজারে এক ডজন ডিম ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের নভেম্বরে ভারত থেকে ৫০ লাখ ডিম আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার, যা চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আসার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ২ লাখ ৯২ হাজার ডিম এসেছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা মোহাম্মদ লিটন বলেন, 'ভারত থেকে কম ডিম আমদানির কারণে বাজারে দামের কোনো প্রভাব পড়েনি। গত এক মাস ধরে খুচরা বাজারে এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়।'
মগবাজার ও হাতিরপুল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, অর্থাৎ, চারটি ডিমের দাম ৫৫ টাকা।
অন্যদিকে, ছোট আকারের পোল্ট্রি খামারিরা পশুখাদ্যের ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে তাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
তাদের মতে, ফিডের দাম কমানো হলে উৎপাদন খরচ কম হবে এবং স্বাভাবিকভাবেই তাহলে ডিমের দাম কমে আসবে। তাই ফিডের দামের দিকে নজর দেওয়ার পরিবর্তে, সরকারের ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত স্থানীয় কৃষকদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ছোট খামারিরা তাদের খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হতে পারে। যার ফলে দেশের ডিমের বাজারে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে।
১১ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে, সরকার বিদেশ থেকে ডিম আমদানি বন্ধ না করলে, তারা ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধ করে দেবে।
অ্যাসোসিয়েশন উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের ডিমের দৈনিক চাহিদা ৪ কোটি। স্থানীয় উৎপাদন বর্তমানে এর চেয়ে বেশি, প্রতিদিন ৪.৫ কোটি ডিম উৎপাদিত হচ্ছে।
তাদের মতে, ডিম আমদানির ফলে স্থানীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হবে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি করবে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'প্রাণিসম্পদ ও ফিড সিন্ডিকেট মাফিয়ারা সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। ২২ সেপ্টেম্বর আমাদের ক্ষুদ্র খামারিদের সাথে একটি বৈঠক হওয়ার কথা আছে এবং আমরা অতিরিক্ত দাম আদায়ের জন্য ফিড সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছি। আমাদের দেশে ফিডের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের দ্বিগুণ। এখানে একটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় ১০ টাকা ২৯ পয়সা, ভারতে যা মাত্র ৫ টাকা। এখানে উৎপাদন খরচ কেন বেশি তা চিহ্নিত করে কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।'
প্রাণিসম্পদ খাতের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কর্পোরেট কোম্পানি ও তাদের এজেন্টরা পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন হাওলাদার।
এদিকে বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে অপরিবর্তিত রয়েছে।