অবশেষে পা হারানো ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অবশেষে মামলা করা হয়েছে।
গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর মতিহার থানায় নিহতের বড় ভাই মো. বেহেস্তী বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। তবে মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং কোনো সাক্ষীর নামও নেই। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা না হলেও অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বাদী মো. বেহেস্তী বলেন, তার ছোট ভাই আবদুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল সেন্টারের স্টোরকিপার পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ওই পদে যোগদানের পর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবিলি অফিসার্স কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন।
এজহারে আরও বলা হয়, গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আবদুল্লাহ আল মাসুদ কোয়ার্টার থেকে তার ব্যবহৃত স্কুটি নিয়ে নবজাতক সন্তান ও অসুস্থ স্ত্রীর ওষুধ নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের ফার্মেসিতে যাওয়ার পর অজ্ঞাতনামা লোকজন তাকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অনুসরণ করে। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে বিনোদপুর বাজার থেকে অজ্ঞাতনামা লোকজন কৌশলে মাসুদকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় ও মতিহার থানা এলাকার অজ্ঞাত স্থানে উপর্যুপরি মারধর করে।
এজহারে আরও উল্লেখ করা হয়, এক ব্যক্তি রাজশাহীর মতিহার থানায় এসে জানতে চান যে মাসুদের নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর কোনো হত্যা মামলা হয়েছে কি না। থানায় কোনো মামলা না থাকায়, তার নির্দেশনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা ও উত্তেজিত ছাত্র-জনতা মাসুদকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য বোয়ালিয়া মডেল থানায় নিয়ে যান। সেখানে মাসুদকে মেঝেতে শুইয়ে উত্তেজিত ছাত্র জনতা থানা ঘিরে ফেলে।
এক ভিডিওর বরাতে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মাসুদকে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় একটি অটোরিকশা থেকে নামিয়ে থানার মেঝেতে রাখা হয়। মাসুদ পানি চাইলে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে পানি দিতে অস্বীকৃতি জানান। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য ছাত্র-জনতা থানায় উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং ওসির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় মাসুদকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
এজাহারে মো. বেহেস্তী অভিযোগ করেন, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে তার ছোট ভাইকে বেধড়ক মারধর করায় তার মৃত্যু হয়েছে। এজাহারের শেষাংশে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ২০১৪ সালে তার ভাইকে মারধর করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। তখন থেকেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তার ভাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে আসছিলেন।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে রাবি সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে গণপিটুনির শিকার হন। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি নগরের বুধপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন।
২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। ওই হামলায় মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাম পা-ও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল হাতের রগ। সে সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর কন্যা সন্তানের বাবা হন মাসুদ। শনিবার গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে নবজাতক শিশুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন তিনি।