গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে শ্রমিক বিক্ষোভ, এক কারখানায় আগুন
বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে গাজীপুরের বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে উত্তেজিত শ্রমিকরা কালিয়াকৈরের চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে, ফলে সড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গাজীপুরের আরও দুটি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষোভের কারণে ইতিমধ্যে জেলার পাঁচটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পুলিশ ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কারখানাগুলোর ৩২ হাজার শ্রমিকের মাসিক বেতনের পরিমাণ ৮২ কোটি টাকা।
হাসিনা সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে আগস্ট মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি। শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে আগস্ট মাসের বেতন দাবি করে আসছে। মঙ্গলবার কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, বেশিরভাগ শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে বেতন জমা হয়নি।
এরপর মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে, যা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলতে থাকে। বুধবার সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে শ্রমিকরা আবারও কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। শ্রমিকরা আশপাশের কারখানার শ্রমিকদেরও তাদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
এদিকে, সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেড ও শ্রীপুরের যমুনা ফেব্রিকস লিমিটেডের শ্রমিকরাও বিভিন্ন দাবিতে বুধবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন।
গত মঙ্গলবারের শ্রমিক আন্দোলনের পর কর্তৃপক্ষ গাজীপুর জেলার পাঁচটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে গাজীপুর গিলারচালা এলাকার ফমকম ফ্যাশন, অ্যাপারেল-২১ লিমিটেড, ফমকম প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইল ও সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকার এস এম নিটওয়্যার লিমিটেড।
এস এম নিটওয়্যার লিমিটেডের ডিজিএম ইশরার মুহতাসিমের সই করা নোটিশে বলা হয়েছে, আলোচনা করে শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হলেও আন্দোলন অব্যাহত থাকায় কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ বেতন দেওয়ার চেষ্টা করছে, তবে শ্রমিকেরা তাদের সময় দিচ্ছেন না। আশা করা হচ্ছে, দুপুরের পর সবার বেতন পরিশোধ করা হবে। অন্যান্য কারখানায় চলমান আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো গ্রুপের বিগবস কারখানায় আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে তাদের পক্ষে তৎক্ষণাৎ আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, "বিগবস নামে একটি কারখানায় আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের দিকে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আমাদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে কর্মীরা চলে আসে।"
তিনি বলেন, "আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছি। তারা সহযোগী করলে আমরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করবো।"