একাধিকবার চেষ্টার পরও বন্ধ বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী ট্রেন
দিল্লির আগ্রহ না থাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান তিনটি রুটেই আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।
ঢাকা রেল সার্ভিস ফের চালু করার জন্য একাধিক প্রস্তাব পাঠালেও দিল্লি এখনও সাড়া দেয়নি বলে বাংলাদেশের রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে উপর্যুপরি প্রচেষ্টার পর ভারত ২০ আগস্ট থেকে মালবাহী ট্রেন পরিচালনার অনুমতি দেয়।
এর আগে ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীদের ডাকা 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচির কারণে আন্তঃসীমান্ত সার্ভিসসহ সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
১ আগস্ট স্বল্প দূরত্বের ট্রেনগুলো চালু হয়, কিন্তু আন্দোলন তীব্র হওয়ায় ৩ আগস্ট ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১২ আগস্ট মালবাহী ট্রেন আবার চালু হয়। ১২ আগস্ট থেকে মেইল, এক্সপ্রেস, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু করে। আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস আবার চালু হয় ১৫ আগস্ট থেকে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রীসেবা ফের চালু করার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করলেও ইন্ডিয়ান রেলওয়ে বোর্ড তাদের পক্ষ থেকে অনুমতি দেয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী বৃহস্পতিবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '২০ আগস্ট থেকে দুই দেশের মধ্যে মালবাহী ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়েছে, কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও যাত্রীবাহী ট্রেনের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চিঠি দিয়েছি, কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তাই আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি; তারা এখন ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে। আশা করছি শিগগিরই আপডেট পাব।'
ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারের উচ্চ-পর্যায়ের মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায়।
টিবিএসের হাতে ওই চিঠির একটি কপি এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ফাঁকা ওয়াগন নেওয়ার জন্য ভারতীয় রেলওয়েকে ১২ আগস্ট থেকে হালকা ইঞ্জিন পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছিল।
তবে কোনো হালকা ইঞ্জিন পাঠানো হয়নি, খালি ওয়াগন ফেরত নেওয়ার জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ২৫৫টি খালি ওয়াগন বর্তমানে বিভিন্ন স্টেশনে ইয়ার্ড লাইন দখল করে পড়ে রয়েছে। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভিন্ন ইন্টারচেঞ্জ রুটের মাধ্যমে ১২ আগস্ট ভারত থেকে বাংলাদেশে লোডেড রেক পাঠানোর অনুমতি দিলেও কোনো লোডেড ট্রেন পাঠানো হয়নি।
১৯ আগস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের অপারেশন বিভাগও মালবাহী ট্রেন চালানোর বিষয়ে ইন্ডিয়ান রেলওয়ের অপারেশন বিভাগকে পৃথক চিঠি দিয়েছে।
এবার বাংলাদেশ রেলওয়েকে অনাপত্তি দেয় ভারতীয় রেলওয়ে।
ফলে বাংলাদেশে আটকে থাকা খালি ওয়াগনগুলো ২০ আগস্ট থেকে ভারতে প্রবেশ করতে পারে, আর ভারতে আটকে থাকা পণ্যবাহী ওয়াগনগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মিতালী এক্সপ্রেস (ভারতীয় রেক) গত ১৭ জুলাই রাতে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা সেনানিবাস স্টেশনে পৌঁছায়।
ট্রেনটি ১৮ জুলাই রাতে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অস্থিতিশীলতার কারণে যেতে পারেনি। মিতালী এক্সপ্রেসের খালি রেকটি বর্তমানে ঢাকা রেলস্টেশনে অবস্থান করছে।
ঢাকা ও নিউ জলপাইগুড়িতে চলাচলকারী আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস, ঢাকা ও কলকাতায় চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা ও কলকাতায় চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস বন্ধ রয়েছে।
সবশেষে চিঠিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস ফের চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে ভারত এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
যোগাযোগ করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া শাখার একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, 'ভারত ইতিমধ্যে মালবাহী ট্রেন পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে আরও আলোচনা চলছে। দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমাদের জানাবে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।'
শনিবার বাংলাদেশ রেলওয়ের জনসংযোগ পরিচালক নাহিদ হাসান খান বলেন, 'বিষয়টি এখন সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কারণ এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখে। তারা এটি নিয়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়নি।'