গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ
গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় আজ বুধবারও (৪ সেপ্টেম্বর) নানান দাবিতে বিক্ষোভ করছেন বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিক।
গাজীপুরের শ্রীপুরের ধনুয়া এলাকায় আর এ কে সিরামিকস টাইলস অ্যান্ড স্যানিটারির প্ল্যানের শ্রমিকরা গত বছরের ইনক্রিমেন্ট এবং ভারতীয় কর্মকর্তাদের বহিস্কারের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
বুধবার ভোর ৫টা থেকে শ্রমিকরা প্রথমে কারখানার মূল গেটে অবস্থান নেন। পরে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুইপাশে বেশ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। পরে অবশ্য পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
কারখানার শ্রমিকেরা জানান, গত বছরের ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) এখনও কার্যকর হয়নি, প্রতি বছরের ইনক্রিমেন্ট ফেব্রুয়ারি মাসে দেওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তারা পাননি। একইসঙ্গে, ভারতীয় কর্মকর্তাদের অযাচিত আচরণ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাদেরকে বহিস্কারের দাবি করেন শ্রমিকরা।
কারখানার স্যানিটারি ওয়ারের কাস্টিং সুপার ভাইজার মেহেদী হাসান বলেন, "আমাদের গত বছরের ইনক্রিমেন্ট ফেব্রুয়ারি মাসে দেওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত আমরা তা হাতে পাইনি। কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার বলেও কোনো সমাধান হয়নি। আর আমাদের কারখানার বেশিরভাগই ঊর্ধ্বতনই ভারতীয়। তাদের সাথে আমাদের মতের মিল হয় না। তারা আমাদের কোনো দাবি-দাওয়া মানতে রাজি হন না। মাঝেমধ্যেই আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। তাই আমরা ভারতীয় কোনো কর্মকর্তা চাই না।"
কারখানার টাইলস প্ল্যানের ল্যাব ইনচার্জ শ্রী বিবেদ বলেন, "প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও এ বছর আগস্ট চলে গেল, ইনক্রিমেন্ট দেননি। গত দুই দিন আগে কারখানার সি.ই.ও, এইচ.আর (এডমিন) ম্যানেজার এবং প্ল্যান ম্যানেজারসহ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এরিয়া করে ইনক্রিমেন্ট টাকা বেতনের সাথে প্রদান করবেন। কিন্তু গত মাসের বেতন পেলেও আমরা ইনক্রিমেন্টর টাকা পাইনি। বাধ্য হয়ে আমরা মহাসড়ক নেমেছি।"
কারখানার সহকারী কাস্টার ম্যান পারভীন আক্তার বলেন, "ইনক্রিমেন্ট আমাদের ন্যায পাওনা, এটি কেন দেবে না? আমরা আমাদের পাওনা চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে।"
কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
অপরদিকে, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেডের সামনে চাকরি প্রত্যাশী শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই লেনে যান চলাচল কিছু সময় বন্ধ থাকে।
এছাড়া, গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ইউনি হেলথ্ ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি ওষুধ উৎপানদকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও আজ আন্দোলনে নামেন। তারা বেতনবৈষম্য দূর করাসহ কয়েকটি দাবি জানান।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর শ্রীপুর ক্যাম্পের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক জানান, "বুধবার সকাল থেকেই কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকরা। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে তারা মহাসড়ক ছাড়েন। পরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।"
বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর অংশে যান চলাচল পুরোদমে স্বাভাবিক হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অপরদিকে, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় ট্রান্সকম বেভারেজের শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি জানিয়ে বুধবাল সকালে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগকৃত শ্রমিকদের চাকুরী স্থায়ীকরণ, ৫ তারিখে মধ্যে বেতন প্রদান, নারী শ্রমিকদের নৈশকালীন ডিউটি বাতিলসহ ২০ দফা দাবি জানিয়েছেন। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করে আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা শান্ত হন।