শ্রমিক বিক্ষোভ: আশুলিয়ায় অন্তত ৭০ কারখানা ছুটি ঘোষণা
পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় যৌথ অভিযান শুরুর ঘোষণা আসার পর আজ সকাল থেকে ঢাকার আশুলিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও দুপুরের পর আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। এরই জেরে আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত অন্তত ৭০টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ পৌনে ৪টা নাগাদ আশুলিয়ার হামীম গ্রুপ তাদের কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে বলে জানান শিল্প পুলিশ-০১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম।
তবে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশের কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করলেও কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে ডিইপিজেডসহ অন্যান্য কারখানাগুলোতে। এছাড়াও শিল্পাঞ্চলের সড়কগুলোর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোথাও কোনো অবরোধের খবর পাওয়া যায়নি। শিল্পাঞ্চলে সতর্ক অবস্থানে থাকার পাশাপাশি পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের টহল কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
শিল্প পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আজ দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলোতে কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। দুপুরের পর জামগড়া এলাকার পলমল গ্রুপের আয়েশা ক্লথিংয়ের শ্রমিকরা কারখানার অভ্যন্তরে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করলে কর্তৃপক্ষ কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করে। পরে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে আশেপাশের অন্যান্য কারখানাগুলোতে গিয়ে গেট ধাক্কাধাক্কি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। একপর্যায়ে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো এলাকা পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের কারখানাগুলোর কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিকদেরও ছুটি দিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর শ্রমিকরা নিজ নিজ বাসায় চলে যায়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি মো. সারোয়ার হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, পলমল গ্রুপের শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কয়েক দিন যাবত আন্দোলন করে আসছিল। এর মধ্যে স্টাফ কর্তৃক শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ, অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত বন্ধ, টিফিন এবং নাইট বিল বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবি রয়েছে। দুপুর পর্যন্ত কারখানাটির শ্রমিকরা কাজ করলেও লাঞ্চের পর আর কাজ করেনি। পরে মালিকপক্ষ ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা বের হয়ে এসে অন্যান্য কারখানার সামনে গেলে সেসব কারখানাও ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব টিবিএসকে বলেন, দুপুরের খাবারের পর কারখানার একদল শ্রমিক বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নামে। তারা সড়ক অবরোধ করে কারখানাগুলোর দিকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে কারাখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় আশুলিয়া এলাকার প্রায় ১০-১২টি কারখানার শ্রমিকরা জড়িত বলেও দাবি করেন তিনি।
পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, অন্যান্য কারখানাগুলোতে কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে, বিভিন্ন কারখানা শ্রমিকদের সাথে সমস্যা সমাধানও করে ফেলেছে। পলমল কেন পারলো না সমস্যা সমাধান করতে, আমরা তা এখনো জানি না। পরে সেখানকার শ্রমিকরা বের হয়ে অন্যান্য কারখানার সামনে গেলেও সেগুলোও ছুটি দিয়ে দেয়।'
'এমনিতে গত কয়েক দিনের তুলনায় এই অঞ্চলের পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও তেমন কোনো ঝামেলা নেই। ৬০-৭০টি ছুটি ঘোষণা করলেও বাকিগুলোতে কার্যক্রম চলমান। এছাড়াও শিল্পাঞ্চলের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করার পাশাপাশি আমাদের টহল কার্যক্রম অব্যাহত আছে', যোগ করেন তিনি।
শ্রমিক বিক্ষোভ প্রসঙ্গে পলমল গ্রুপের আয়েশা ক্লথিং কারখানা কর্তৃপক্ষের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার পর বিজিএমইএ বোর্ড গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং জড়িতদের শনাক্ত করতে সহায়তা চান। এনএসআই প্রধান জড়িতদের শনাক্তের আশ্বাস দেন।
এর আগে আজ সকালে আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেছিলেন, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ার প্রধান এলাকাগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনীও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
উল্লেখ্য, আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করে গতকাল বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশী শ্রমিকরা। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেড তৈরি করে অবরোধ করেন ও বিভিন্ন কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন।
পরিস্থিতিতে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থিত অন্তত ৩০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ অভিযান পরিচালনার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
বৈঠকে বিশৃঙ্খলায় জড়িত বহিরাগতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। এছাড়া অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আজ থেকে সব কারখানা চালু রাখতে মালিকদের অনুরোধ জানান তিনি।