পুলিশের ভ্যানে লাশ ওঠানোর ভিডিওর ঘটনাস্থল আশুলিয়া, ঘটনা ৫ আগস্টের
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন পুলিশ সদস্য কয়েকটি লাশ একটি ভ্যানে তুলে সেগুলো ব্যানার দিয়ে ঢাকছেন। শেখ হাসিনার পতনের পরপরই ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া থানার কাছে এ ভিডিওটি করা হয়েছিল।
গুগলের জিওলোকেশন উপাত্ত ও আশপাশের ছবি বিশ্লেষণ করার পর পুলিশ সূত্র ভিডিওটির তারিখ ও অবস্থান নিশ্চিত করেছে।
এএফপির বাংলাদেশ ব্যুরোর ফ্যাক্ট-চেকিং-এর প্রধান কদর উদ্দিন শিশির বলেন, বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কাছে থানার সামনের একটি গলিতে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, দুই পুলিশ কর্মকর্তা লাশ স্তুপ করে রাখছেন। স্থানীয় পুলিশ ও বাসিন্দারা তাদের একজনকে ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে শনাক্ত করেছেন। তারা আরও বলেন, সাধারণ পোশাক ও পুলিশের হেলমেট-বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরা অন্যান্য পুলিশ সদস্য বেশিরভাগই একই পুলিশ শাখার।
ঘটনার দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সাভার প্রতিনিধি ওই এলাকা পরিদর্শন করলেও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ছবি তুলতে পারেননি। একদিন পর আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের ভ্যানে পোড়া লাশ দেখেন বলে জানান তিনি।
কী হয়েছিল সেদিন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর বাইপাইল এলাকায় বিজয় মিছিল নিয়ে আশুলিয়া থানা ঘেরাও করে জনতা।
আতঙ্কিত পুলিশ সদস্যরা থানায় ঢুকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গেটে তালা লাগিয়ে দেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরও বিক্ষোভকারী থানা ঘেরাও করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন ও গেট ভাঙার চেষ্টা করেন।
পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সাঈদ আহমেদ বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভকারীরা তখন পুলিশের আত্মসমর্পণের দাবি করছিলেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। ওসি অনুনয় করে বললেন, 'আমরা হেরেছি। আপনারা জিতেছেন। আমাদের মাফ করে দেন। সবাই বাড়ি ফিরে যান।'
তবে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। এতে গলিতে থাকা বেশ কয়েকজন আহত হন। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় জনতা।
পাশের একটি ভবনে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী রনি আহমেদ জানান, বিকেলে থানার গেটে পুলিশ জনতার ওপর গুলি চালালে আশপাশে থাকা ১০–১২ জন আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
কয়েক মিনিট ধরে গুলি চলে। শিক্ষার্থীরা বেঁচে যাওয়াদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে ছয় থেকে সাত জন রয়ে যান। এরপর স্থানীয়রা এলাকা ঘেরাও করে থানার দিকে যেতে থাকেন বলে জানান রনি।
ফাহিমা আক্তার নামক আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গুলিবিদ্ধ সাতজনের দেহ থানা সংলগ্ন পলিমার অ্যান্ড প্লাস্টিক লিমিটেডের কর্মকর্তাদের ফ্যামিলি কোয়ার্টারের দেয়ালের পাশে পড়ে ছিল।
পুলিশ একটি ভ্যানে লাশ বোঝাই করছে দেখতে পান বলে জানান ফাহিমা। আগুন দেওয়ার আগে মৃতদেহগুলো প্রথমে একটি ব্যানার ও পরে একটি বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।
রকি আহমেদ নামক একজন পোশাককর্মী পুলিশ সাতজন আহতকে একটি রিকশা ভ্যানে তুলে থানার পার্কিং এলাকায় নিয়ে যেতে দেখেছেন।
রকি বলেন, 'মরদেহগুলো পোড়ানো হয়। এরপর পুলিশ থানা থেকে গুলি চালাতে চালাতে বের হয়ে যায়। একজন আহতকে তখনো হাতকড়া পরা অবস্থায় আগুনের মধ্যে দেখা যায়।'
আশুলিয়া থানার সামনে পুড়ে যাওয়া লাশের মধ্যে রয়েছে আশুলিয়ার জামগোড়ার শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আসশাবুরের দেহও। তার ভাই, স্থানীয় বাসিন্দা রেজওয়ানুল ইসলাম তার পোড়া লাশ শনাক্ত করেন।
রেজওয়ানুল জানান, আসশাবুর গুলি খেয়ে থানার পাশের রাস্তায় পড়ে থাকে। 'পরে পুলিশ তার প্রাণহীন দেহ রাস্তা থেকে সরিয়ে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। আসশাবুর জীবিত না-কি মৃত ছিল, তা বোঝার কোনো সুযোগ আমাদের ছিল না।'
রেজওয়ানুল বলেন, তারা আসশাবুরকে তার নীল জার্সি দেখে শনাক্ত করেছেন। পোড়া লাশের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল জার্সিটি।