এবারের ঈদে সাড়ে ৩ লাখ চামড়া কেনার লক্ষ্য চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের
এবারের কোরবানির ঈদে চট্টগ্রামে সাড়ে তিন লাখ চামড়া কেনার আশা করছেন আড়তদাররা। গতবারের তুলনায় লবণের দাম কম থাকায় স্বস্তির কথাও জানিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, "গতবছর কোরবানির ঈদে প্রায় ৩ লাখ ৪২ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি ছিল গরুর চামড়া। এবারের ঈদেও আমরা সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট করেছি।"
মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, "ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে টাকা পাওনাসহ নানান কারণে চট্টগ্রামে আড়তদারের সংখ্যা কমে গেছে। আগে প্রায় ২৫০ জন আড়তদার চামড়া সংগ্রহ করতেন। গত কয়েক বছরে তা কমতে কমতে ২০/৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। এত অল্প আড়তদারের পক্ষে বেশি চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব না।"
তবে গতবছরের তুলনায় এ বছর লবণের দাম কম থাকায় এবং বাজার পরিস্থিতি ভালো থাকায় অনেকটা স্বস্তিতে থাকার কথা বললেন আড়াতদার সমিতির এই নেতা।
রিফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড সেলস) মোখলেসুর রহমান বলেন, "গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে চামড়া শিল্পে ভালো ব্যবসা যাচ্ছে না। সারা বছরের মোট সিংহ ভাগ চামড়াই সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদকে ঘিরে। কিন্তু এই চামড়া শিল্পের দুর্দিনে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ফলে এই অবস্থায় শিল্পটিকে বাঁচাতে শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে।"
বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০-৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের মৌসুম।
আগামীকাল (১৭ জুন) বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ হতে যাচ্ছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, পরের দুই দিনও কিছু পশু কোরবানি চলবে। ওই সময় পাড়া-মহল্লা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে বা সংগ্রহ করে মৌসুমী ক্রেতারা তা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে।
আগেরবারের তুলনায় এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম কিছুটা বেশি
ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে।
ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গত বছর যা ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ছিল।
এছাড়া, সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে— যা গত বছর ছিল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা। আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা— যা আগের বছর ছিল ১২ থেকে ১৪ টাকা।
আড়তদার সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, "সরকারের বেধে দেওয়া দামটি সংরক্ষণের পরের দাম— যা অনেক কোরবানিদাতা কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না। তারা মনে করেন সরকারের বধে দেওয়া দামে আড়তদাররা চামড়া কিনবেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।"
ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার সময় ২০ শতাংশ কর্তন করে চামড়া কিনে থাকেন। আবার সব চামড়া চট্টগ্রামে বিক্রি হয় না। সে কারণে চামড়া ঢাকায় পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তাতে গাড়ি ভাড়া এবং অতিরিক্ত আড়ত খরচ বৃদ্ধি পায়।
আব্দুল কাদের বলেন, "এ বছর গরমের তীব্রতা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি, যেটি চামড়া সংগ্রহের জন্য অনুকূলে নয়। চামড়া রেখে দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ থাকবে চামড়া সংগ্রহ করার পর যাতে লবণ দিয়ে রাখা হয় এবং নিজেদের কাছে রেখে না দিয়ে যাতে আড়তে নিয়ে আসা হয়।"