নির্বাচনে যাচ্ছেন না রওশন, জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতা, ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ
একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ আসন্ন নির্বাচনের বাহিরেই থাকছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি দলের নেতাদের অবমূল্যায়ন করেছে। এ কারণে তিনি নির্বাচন করবেন না। ফলে তিন দশকেরও বেশি সময় পর রওশনকে ছাড়াই নির্বাচনে গেল জাতীয় পার্টি।
শুধু রওশন এরশাদই নন তার ছেলে সাদ এরশাদও কোনও আসন থেকে দলীয় কিংবা স্বতন্ত্র মনোনয়ন নেননি। তবে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও দলের সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা তার নির্বাচনী আসন রংপুর-১ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছেন।
জাতীয় পার্টিতে রওশন-কাদের দ্বন্দ্বে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী নেতা রওশন এরশাদের পক্ষে অবস্থান নেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙা। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এ কারণে মসিউরকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এরপর থেকে রওশন এরশাদ বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিতি পান রাঙা।
বুধবার রাতে সাংবাদিকদের রওশন এরশাদ বলেন, 'আমি দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এবারও তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক সহযোগিতা না করার কারণে দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এমন অবস্থায় দলের নেতাদের অবমূল্যায়ন করার কারণে আমার নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।'
রওশন এরশাদ ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয়বারের সংসদ সদস্য। এর মধ্যে ২০০৮ সালে তিনি ভোটে হেরে যাওয়ার পর উপনির্বাচনে এরশাদের ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আমৃত্যু এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
জাতীয় পার্টির নেতাদের দাবি, তারা বেশ কয়েকবার মিটিং করে রওশন এরশাদকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু তাকে দলে ফেরানো সম্ভব হয়নি।
আসন্ন নির্বাচনে রওশন এরশাদের অনুসারী অনেক নেতাই জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নেয়নি। এদের মধ্যে রওশন এরশাদ, সাদ এরশাদ ও মশিউর রহমান রাঙা ছাড়াও রয়েছেন জিয়াউল হক মৃধা, গোলাম মসীহ, কাজী মামুনূর রশীদ ও ইকবাল হোসেন উল্লেখযোগ্য।
মশিউর রহমান রাঙা সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলাম, এবারও নির্বাচন করব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। আমাদের গ্রুপ থেকে বলা হয়েছে যাদের ক্ষমতা আছে তারা নির্বাচন করবে।'
দলের বহিস্কৃতদের দলে ফেরানোর বিষয়ে একমত না হওয়া, নির্বাচনী আসন নিয়ে বিরোধসহ দলীয় দ্বন্দে তারা কেউই মনোনয়ন নেয়নি। তবে রওশন পন্থীদের অভিযোগ তাদের অনেকেই মনোনয়ন কিনতে গিয়েছিলেন কিন্তু তাদেরকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা টিবিএসকে বলেন, 'আমরা জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর কৌশলের কাছে পরাজিত। তারা কৌশলে রওশনপন্থী বলে পরিচিতদের দল থেকে বের করে দিয়েছেন। মূল উদ্দেশ্যই ছিল রওশন এরশাদকে ক্ষমতার বাহিরে রাখা।'
নির্বাচনে না যাওয়ায় রওশন এরশাদ এর নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে জাপার উপজেলা সভাপতি আবু মো. মুছা সরকারকে প্রার্থী করা হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুর রহমান।
এছাড়া মসিউর রহমান রাঙা রংপুর-১ ও জিয়াউল হক মৃধা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মসিউর রহমানের আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম।
এদিকে জি এম কাদের দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একটি ঢাকা-১৭, অন্যটি রংপুর-৩ আসন। ২০১৮ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে সাদ এরশাদ সংসদ সদস্য হন রংপুর-৩ থেকে।
বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এবারে জাতীয় পার্টির আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে নারাজ। ফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা কিছুটা শঙ্কিত রয়েছেন।
রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা নির্বাচন থেকে পিছিয়ে গেলাম। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেবো। তারা (জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নু) আমাদের মনোনয়ন ফরমও দেয় নাই বরং লাঞ্ছিত করেছে। তারাই আমাদের বাধ্য করেছে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য।'