ইংরেজিতে দুর্বলতার প্রভাব এইচএসসির ফলাফলে
ইংরেজিতে খারাপ করার কারণে ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় কমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়াতে তাই শিক্ষকদের ওয়ার্কশপ করানো, ইংরেজির শিক্ষকদের ট্রেনিং দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলো।
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক পাসের হার সবচেয়ে বেশি বাংলায় ৯৪.৬৬%। আর সবচেয়ে কম ইংরেজিতে ৮২.৭৩%। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আইসিটি এবং পদার্থবিজ্ঞানে ৯২.৪৬%, রসায়নে ৯২.৭%, হিসাববিজ্ঞানে ৮৪.৯৬%, পৌরনীতিতে গড় পাসের হার ৯৬.৮৮%।
ইংরেজির পাশাপাশি উচ্চতর গণিত ও হিসাববিজ্ঞানে কিছু কিছু বোর্ডের শিক্ষার্থী খারাপ করেছে।
নয়টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে যশোরে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ সবচেয়ে কম ছিল।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যশোর শিক্ষা বোর্ডে এবার ২২.৬৪% পরীক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল করেছেন। এই বোর্ডে ইংরেজিতে গড় পাসের হার ৭৭.৩৬%। তাই সার্বিক পাসের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে এবার এই বোর্ড।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে বরিশাল বোর্ড। এই বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৮৬.০১%। এছাড়া ঢাকা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৮৬.৮৩%, রাজশাহীতে ৮৩.১৮%, কুমিল্লায় ৮১.৯১%, চট্টগ্রামে ৮৮.৯১%, সিলেটে ৮২.১৯%, দিনাজপুরে ৮২.৮০%, ময়মনসিংহে ৭৫.৩৮%।
যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহসান হাবীব বলেন, "এ বছর ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি খারাপ করেছে, যা আমাদের চিন্তার বাইরে ছিল। এছাড়া হায়ার ম্যাথেও শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। ইংলিশে শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটু প্যানিকড (শঙ্কিত) থাকে। এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্কুলে ঠিকমত ইংলিশ শিখতে পারেনি। আমরা পরীক্ষা এগিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ২৪ মাসের জায়গায় ২০ মাসেই পরীক্ষা হয়েছে সে কারণে প্রস্তুতি নেয়ার সময় কম পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।"
অধ্যাপক আহসান হাবীব বলেন, "ইংলিশের বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার বোর্ডে দশটি জেলা আছে, প্রত্যেক জেলাতে আমরা রেজাল্ট পর্যালোচনা বিষয়ে মতবিনিময় সভা করবো, যেখানে জেলার সব কলেজের প্রিন্সিপাল ও ইংরেজির একজন শিক্ষক থাকবেন। শিক্ষকরা কিভাবে শিক্ষার্থীদের আরো পড়াশুনায় মনোযোগী করতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে প্রিন্সিপালরা কী করতে পারেন এবং অ্যাকাডেমিকভাবে শিক্ষকেরা দুর্বলতাগুলো পর্যালোচনা করে কীভাবে মেকআপ করতে পারি তা নিয়ে আলোচনা হবে।"
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী হাসান কামাল বলেন, "আমাদের বোর্ড এবার অ্যাভারেজ রেজাল্ট করেছে। ইংলিশে ফেল করেছে বেশি। ইংলিশে শিক্ষার্থীরা কি ধরণের ভুল করছে সেসব সমাধানে গর্ভনমেন্ট কলেজের যেসব শিক্ষক খাতা দেখেন তাদের নিয়ে শিগগিরই একটি ওয়ার্কশপ করা হবে। তারা যে পরামর্শ দিবেন, তার ভিত্তিতে সব কলেজের ইংলিশ শিক্ষকদের সে বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হবে।"
নীতিগত ঘাটতির কারণে কাটছে না ইংলিশের দুর্বলতা
শিক্ষার্থীরা প্রায় প্রতি বছরই অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় ইংরেজিতে খারাপ ফলাফল করছে। গত দুই বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হার কিছুটা বেড়েছিল। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ইংরেজিতে পূর্ণ নম্বরেই পরীক্ষা দেয় শিক্ষার্থীরা। ওই বছর সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজিতে গড় পাসের হার ছিল প্রায় ৯১%।
প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও ইংরেজিতে ফেল করে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী।
লালমাটিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী লামিশা রশিদ বলেন, "অন্যান্য সাবজেক্টের তুলনায় ইংলিশ অনেক কঠিন লাগে। স্কুলেও ব্যাচ করে ইংলিশ পড়েছি, ক্লাসেও ঠিকমত পড়ায় তারপরও ইংলিশ কঠিন লাগে। গ্রামার, প্যারাগ্রাফ সবকিছু অনেক বেশি জটিল লাগে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসাদ মুর্তজা টিবিএসকে বলেন, "আমাদের পলিসিতে প্রচুর গণ্ডগোল আছে। শিক্ষাব্যবস্থা তিন ভাগে বিভক্ত। ইংরেজি পড়ানোর জন্য যে মানের দক্ষ শিক্ষক দরকার তা আমাদের নেই। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ঘাটতি আছে।"
"গ্লোবাল সিটিজেন হিসেবে আমরা ইংরেজিকে কীভাবে দেখতে চাই? আমরা কি ইংরেজিকে সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ হিসেবে দেখছি না-কি ফরেন ল্যাংগুয়েজ হিসেবে দেখছি-এ প্রশ্নের উত্তর বের করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক, এবং এরপরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও ইংরেজিতে দক্ষতা তৈরি হচ্ছে না। ১২ বছরের দুর্বলতা উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে এসে ধরা পড়ছে।"