ঘর সামলানো ও আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার কৌশলে বিএনপি
আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যাতে দলীয় কোন নেতা ও সমমনা অন্যান্য আন্দোলন মিত্র কেউ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল না করে-সেভাবে সর্তক দৃষ্টি রাখছে বিএনপি-জামায়াত। আগামী এ ১০ দিন নেতাদের উপর সর্তক দৃষ্টি রেখে ঘর সামলানো ও পাশাপাশি চলমান আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলগুলো।
আগামী ৩০ নভেম্বর নমিনেশন পেপার দাখিলের শেষ দিন। তারপর কেউ আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তাই এ সময়টাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত।
বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, কেউ যাতে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক দলগুলো। এছাড়াও অন্যান্য দলও যাতে দলগত বা স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন-সরকারের অধীনে নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার জন্য কিছু কিংস পার্টি গড়ে উঠেছে। যারা বিএনপির কিছু নেতাকে প্রলোভন দেখিয়ে নির্বাচনে নেয়ার জন্য সরকারের এজেন্ডায় কাজ করছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির কিছু সাবেক নেতার দল 'তৃণমূল বিএনপি' ও 'বিএনএফ' সরকারের প্ররোচনায় বিএনপি কিছু নেতাকে প্রলোভন দেখাচ্ছে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে নেয়ার। এজন্য বিএনপি সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের তৃণমূল বিএনপি ও বিএনপি থেকে কোন ধরণের যোগাযোগ না রাখতে কঠোর সাংগঠনিক বার্তা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নেতাদের উপর এ ব্যাপারে নজরদারি চালানো হচ্ছে।
এছাড়াও আন্দোলনের সঙ্গী ছোট দল ও ছোট ছোট দলের বড় নেতারা যেন সরকার চাপে বা টোপে পড়ে নমিনেশন পেপার দাখিল না করে –সে ব্যাপারেও মনিটরিং করছে। বিএনপির হাই কমান্ড থেকে ছোট দলগুলোর সাথে বারবার যোগাযোগ করছে।
সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির কেউ স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ও সমমনা আরো ১০-১২টি ইসলামি দলকেও মটিভেশন-মনিটরিং করছে জামায়াত। যাতে সরকারে চাপে বা টোপ পড়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নমিনেশন ফরম না দাখিল করে এসব সরকার বিরোধী ইসলামি দলগুলো।
এদিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনকে অসাংবিধানিক বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রোববার (১৯ নভেম্বর) এ রায় দেন।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত সরকারের চাপে পড়ে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। যেমনটি ২০১৪ সালেও রওশন এরশাদের নেতৃত্বে হয়েছে। তবে সর্বশেষ জিএম কাদের যে বলেছেন- 'সংলাপ ছাড়া নির্বাচনে গেলে স্যাংশনে পড়বে জাতীয় পার্টি', সেটাই প্রমাণ করে এখানে অবাধ-সুন্ষঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোন পরিবেশ নাই।
এদিকে আওয়ামী লীগ অফিসে নমিনেশন ফরম কিনতে নেতাকর্মীদের ভিড়-উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেলেও সারাদেশে বিপরীত চিত্র বিএনপির অফিসে। নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় সহ সারাদেশে বিএনপি অফিসে নেতাকর্মীদের দেখা নেই। গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপি অফিসগুলোতে যেতে পারছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ''কেন্দ্রীয় অফিস দূরে থাক-বিএনপি সহ সরকার বিরোধী আন্দোলকর্মীরা বাসায় থাকতে পারছে না,পুলিশের গ্রেপ্তার- নির্যাতন এড়াতে বনেজঙ্গলে রাত্রিযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে সারাদেশের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা, ছেলেকে বাসায় না পেয়ে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নেতাকর্মীদের ভাই-বোন-স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।"
"পুলিশ পাহারায় তফসিল ঘোষণা করেছে সরকার এবং সারাদেশে নজিরবিহীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করেছে সরকার। আবার জোর করে ক্ষমতায় আসার জন্য সম্পূর্ণ প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করছে সরকার," এমন অভিযোগ রিজভীর।
রিজভী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১০ জনের বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে ২ হাজার ৮৫ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও ১৮টি মামলা হয়েছে; এ সময় বিএনপির একজন সদস্য নিহত হন, আহত শতাধিক।
এদিকে রবিবারে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের টিলেঢালা হরতাল পালিত হয়েছে। ঢাকার বাইরে বড় কিছু মিছিল দেখা গেলেও রাজধানীতে ছিল ছোট কিছু ঝটিকা মিছিল। রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের পরিমাণ বাড়লেও দূরপাল্লায় যাত্রীর অভাবে ছাড়েনি বললেই চলে।