আগামীকাল সোমবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে সোমবার সকাল থেকে মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হবে।
আজ রোববার (১৯ নভেম্বর) রাতে জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সকাল ১১ টা থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করবে জাতীয় পার্টি। যা চলবে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
এরপরে ২৮ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করবে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় হতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও গ্রহণ করা হবে। প্রতিদিন দুই বিভাগ করে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে ২৪ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত।
প্রতিটি মনোনয়ন ফরম ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করবে দলটি।
তবে এখনও নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যাবে কিনা– সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে দলটি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি'র বিশেষ দূত মাশরুর মওলা টিবিএসকে বলেন, 'নির্বাচন কমিশন যেহেতু আমাদের দলীয় প্রতীক চেয়ে চিঠি দিয়েছে, তাই নির্বাচনের আগের কাজ এগিয়ে রাখতে নমিনেশন পেপার বিক্রি শুরু করেছি। নির্বাচনে যাব কিনা– সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না আমরা।'
যদি ৩০ নভেম্বরের আগে কোনও সংলাপ নাহয়, সেক্ষেত্রে কি নির্বাচনে যাবে জাতীয় পার্টি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।'
তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আমাদের নেতা-কর্মীরা এসেছেন; তাদের কষ্ট লাঘবেই আমরা মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছি। মনোনয়ন বিক্রি মানেই নির্বাচনে যাওয়া নয়। আমরা এখনও চাই একটি সংলাপ হোক।
নির্বাচন এলেই জাতীয় পার্টির ভোটে যাওয়া, না যাওয়া কিংবা জোটবদ্ধ হওয়া, না হওয়া নিয়ে আলোচনা নতুন কোনও ঘটনা নয়। এবারের নির্বাচনে এসেও এ আলোচনাতেই আছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এখনও নির্বাচনে যাবে কি-না সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে রওশন এরশাদ অংশ জানিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের জোটে নির্বাচনে যাচ্ছে।
শনিবারে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত আলাদা আলাদা দুটি চিঠি এ আলোচনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রবিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। সেখানে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপ করা যায় কিনা এবং তফসিল পেছানোর যায় কিনা সে বিষয়ে অনুরোধ করেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে দেন-দরবার চলছে। জাতীয় পার্টি থেকে ১০০টি আসনের নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে তবে ৪০টির মতো আসনের নিশ্চয়তা পেলেই নির্বাচনে আসবে জাতীয় পার্টি এমনটাই বলছে সূত্র।
তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু রবিবার সংবাদিকদের বলেছেন, "নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি আমাদের নেওয়া আছে কিন্তু এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমরা মনে করি নির্বাচনের পরিবেশ এখনও হয়ে উঠেনি।"
তিনি বলেন, "সঠিকভাবেই যদি নির্বাচন হয় তবে আমরা এককভাবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে চাই। আমরা এবার কোনও জোট, মহাজোট করতে চাই না।"
তিনি আরও বলেন, "জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনও দ্বন্দ নেই। রওশন এরশাদসহ যারা আওয়ামী লীগের সাথে জোট করতে চায় তারা পার্টির কোনও সদস্য নয়। ২/১ জন বহিষ্কৃত, একজন শুধুমাত্র আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমাদের দলের। তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। জাতীয় পার্টির দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার কোনও এখতিয়ার নেই।"
জাতীয় পার্টির নির্বাচনের আগে এমন চিত্র নতুন নয়। ১৯৮৬ সালে গঠিত এই দলটি এখন ৪ ভাগে বিভক্ত। এরশাদের নেতৃত্বে ছিল মূল দল যার প্রতীক লাঙল। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর শীর্ষ নেতাদের একাংশ দল পাল্টে প্রধানত যান বিএনপিতে। পরে কেউ কেউ আসেন আওয়ামী লীগে। পরে ১৯৯৯ সালে ও ২০১৪ সালে আরও দুটি ভাঙ্গন ঘটে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চার দলীয় ঐক্যজোটের বিপরীতে আওয়ামী লীগ-জাপার সমন্বয়ে গঠিত হয় মহাজোট। এই নির্বাচনে ভোটের হার কমে ৭ শতাংশে নামলেও আসন বেড়ে হয়ে যায় ২৭টি। এর প্রতিটিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দিয়ে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিয়েছিল।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। সেই ভোটে আওয়ামী লীগের সমর্থনে জাতীয় পার্টি আসন পায় ৩৪টি। এই নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সব আসনে জোটবদ্ধ হয়ে না লড়লেও বিজয়ী জাপা প্রার্থীদের আসনগুলোয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। যেখানে যেখানে দুই দলেরই প্রার্থী ছিল, তার সবগুলোতেই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে জাতীয় পার্টির।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় জাতীয় পার্টি। এই নির্বাচনে দলটি আসন পায় ২৭টি। ভোট শেষে আবার ভেঙে দেয়া হয় মহাজোট।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এবারেও হয়তো ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। তদের ধারণা এবারে জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে না লড়লেও সমঝোতায় পাওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের আসনগুলোয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিবে না।