লক্ষ্মীপুর-৩: নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী, অনিয়মের অভিযোগে প্রতিপক্ষের ভোট বর্জন
লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জাল ভোট ও অনিয়মের অভিযোগ এনে দুই প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।
রোববার (৫ নভেম্বর) ভোটে নৌকা প্রতীকে পিংকু এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পাটির প্রার্থী মো. রাকিব হোসেন লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন তিন হাজার ৮৪৬ ভোট।
নির্বাচনে আরও লড়া জাকের পার্টির প্রার্থী দুই হাজার ১২৬ এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির প্রার্থী ৫১৩ ভোট পেয়েছেন।
রাত ৮টায় লক্ষ্মীপুর টাউন হলে ফলাফল ঘোষণার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন জানান, নির্বাচনে শতকরা ৩১ দশমিক ৮৫ ভোট পড়েছে। আসনটির চার লাখ তিন হাজার ৭৪৪ জন ভোটারের মধ্যে এক লাখ ২৮ হাজার ৬১২ ভোট দিয়েছেন।
কম ভোটার উপস্থিতির মাঝে জাল ভোট, কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়ম, বলপ্রয়োগ ও এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. রাকিব হোসেন এবং জাকের পার্টির প্রার্থী শামছুল করিম খোকন ভোট বর্জন করেছেন। দুপুরে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা ভোট বর্জন করেন।
১৫টি কেন্দ্রের নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে মো. রাকিব হোসেন বলেন, 'সকাল থেকে আমি বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে দেখেছি, আমার কোনো এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।'
রোববার সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১১৫টি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত চোখে পড়ার মতো ছিল না। কয়েকটি কেন্দ্রে ১৫–২০ মিনিট পর পর দুই-একজন করে ভোটারকে ভোট দিতে দেখা গেছে। ভোট কেন্দ্রগুলো ছিলো পুরোপুরি নিরুত্তাপ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ উপনির্বাচনে ভোটাররা আগ্রহী ছিলেন না বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।
তবে জাপা প্রার্থীর দাবি, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরেরাও ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'একটি কেন্দ্রে বাচ্চা ছেলেমেয়েকে ভোট দিতে দেখেছি।' ভোট বর্জনকারী অপর প্রার্থী শামছুল করিম খোকন বলেন, 'বিভিন্ন কেন্দ্রে বাইরের পরিবেশ ঠিক রেখে ভেতরে জাল ভোট দেওয়া হচ্ছে। আমি খবর পেয়েছি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এক একজন ১০–১৫টি করে ভোট দিয়ে বাক্স ভর্তি করেছেন।'
এদিকে দুই প্রার্থীর অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে ভোটবর্জনের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, 'ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হয়েছে। কোথাও কোনো প্রভাব খাটানো হয়নি। মানুষ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।'
তিনি জানান, তারা সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় সচেতন ছিলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, 'সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থী কী অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন, তা আমাকে জানাননি তারা। ভোট বর্জনের বিষয়টিও আমি গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি।'
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে ভোটকেন্দ্রে চারস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল। প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করেছে।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তায় ১৬ জন ম্যাজিষ্ট্রেট, ছয় প্লাটুন বিজিবি, ও সাত প্লাটুন র্যাব দায়িত্ব পালন করেছেন।
উল্লেখ্য, ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল মারা যান। ৪ অক্টোবর আসনটি শূন্যসহ তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ আসনের ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে।