শ্রমিক বিক্ষোভ: আশুলিয়ায় দুটি কারখানা ও গাড়ি ভাঙচুর

পোশাক খাতের শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আশুলিয়ায় চলমান শ্রমিক আন্দোলনের পঞ্চম দিনে ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপ ও নাসা গ্রুপের দুটি পোশাক কারখানা ও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের পোশাক কারখানা এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড ও ও নাসা গ্রুপের কারখানা সাইন অ্যাপারেলসে এই ভাঙচুর চালায়।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড কারখানার গ্যারেজে রাখা একটি প্রাইভেট কার ও একটি নোহা মাইক্রোবাসে ভাঙচুর চালান।
পরে শিল্প পুলিশের সদস্যরা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে ও কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প পুলিশের একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বেলা ১২টা পর্যন্ত আশুলিয়ার পরিস্থিতি সার্বিকভাবে ভালো ছিলো। সোয়া ১২টার দিকে কাঠগড়া আমতলা এলাকায় কয়েকটি কারখানার ২-৩ হাজার শ্রমিক হঠাৎ একত্রিত হয়ে নাসা গ্রুপের কারখানা সাইন অ্যাপারেলসে ভাঙচুর চালান।
'এ সময় শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়ে কারখানার গ্লাস ও সিসিটিভি ক্যামেরাও ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।'
ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের কোম্পানি সচিব আরএকে লিটন টিবিএসকে বলেন, 'সকাল থেকে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কারখানায় কাজ চলছিল। সকাল ১০টার পর পার্শ্ববর্তী আগামী অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা হঠাৎ বের হয়ে এসে আমাদের কারখানায় হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা আজকের জন্য কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছি।'

সকাল থেকে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় কাঠগড়া এলাকার ঘটনা দুটি ছাড়া সার্বিকভাবে গত কয়েকদিনের তুলনায় আশুলিয়ার পরিস্থিতি আজ তুলনামূলক অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগে সকাল থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কের পাশে অবস্থিত এসব এলাকার কিছু কারখানা ছাড়া অধিকাংশ কারখানাই বন্ধ রয়েছে।
এছাড়াও দুপুর ১টা পর্যন্ত এসব এলাকায় কোনো শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।
শিল্প-কলকারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন পয়েন্টে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জলকামানসহ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এছাড়াও পুলিশের পাশাপাশি এলাকাজুড়ে এপিসিসহ (আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার) টহল দিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা।
আশুলিয়া এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজিবির লে. কর্নেল রেজাউল কবির টিবিএসকে বলেন, 'গত পরশু থেকে আশুলিয়ায় আমাদের ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।'
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, 'বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে আশুলিয়ার পরিস্থিতি গত পরশু ও তার আগের দিনের তুলনায় আজ ভালো রয়েছে। গতকালও অনেকটা ভালো ছিল। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। কিছু কিছু স্থানে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করেছিলেন, আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। আপাতত পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।'