২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ: ঢাকায় আসতে শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা
২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। গ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানি এড়াতে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় উঠছেন জেলার নেতাকর্মীরা।
বিএনপি-জামায়াত সূত্রে জানা যায়, সরকার সমাবেশের আগের দুই-একদিন পথে পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এবং গ্রেপ্তার আরও বেড়ে যেতে পারে-এমন চিন্তা মাথায় রেখে দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে বেশি দূরের জেলার নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার জন্য বলা হয়েছে।
ঢাকার আশেপাশে সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ইত্যাদি জেলাতে দূর দূরাত্বের নেতাকর্মী আসার খবর পাওয়া যাচ্ছে ।
পঞ্চগড় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু টিবিএসকে বলেন, "সমাবেশ সফল করতে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা যেভাবেই হোক সমাবেশে যোগদান করব। ঢাকায় সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে থাকবে।"
এছাড়া যুবদল, ছাত্রদলসহ মূল দলেরও ব্যাপক প্রস্তুতি আছে বলে জানান তিনি।
"কিছু কিছু নেতাকর্মী ইতোমধ্যে ঢাকায় চলে গেছে এবং ২৬-২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মী পঞ্চগড় থেকে যাওয়ার প্রস্তুতি আছে," বলেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু টিবিএসকে বলেন "রাজশাহী থেকে ঢাকায় বিএনপির যেসব নেতাকর্মী মহাসবাবেশে যাবেন তাদের চার ভাগের এক ভাগ ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছে গেছেন। বুধবারের (২৫ অক্টোবর) মধ্যে অধিকাংশ নেতাকর্মী বাস ও ট্রেনে ঢাকায় পৌঁছাবেন। যাদের জরুরি কাজ আছে কেবল তারাই ২৭ তারিখে ঢাকায় যাবেন।"
কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ারদার টিবিএসকে বলেন, "আমাদের কুষ্টিয়া থেকে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে দুই/তিন গুণ বেশি নেতাকর্মী ঢাকায় যাচ্ছে, যাদের আত্মীয় স্বজন ঢাকাতে আছে-তাদের একটা বড় সংখ্যা ঢাকায় চলে গেছে।"
কুমিল্লা -১০ নির্বাচনী আসনে জামায়াতের দলীয় মনোনিত এমপি প্রার্থী ইয়াসিন আরাফাত টিবিএসকে বলেন, "এখন পর্যন্ত সেভাবে রাস্তায় নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার বড় ধরনের খরব পাচ্ছি না। পরিস্থিতি সব ঠিক থাকলে কুমিল্লা থেকে ৩০ হাজারের অধিক নেতাকর্মী ঢাকায় ২৮ তারিখ উপস্থিত হবে।"
সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি আসছে
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাওয়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ঘেরাও, বিক্ষোভ, অবস্থান, অবরোধ এমনকি হরতালের ঘোষণাও আসতে পারে।
হামলা-গ্রেপ্তারের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে
বিএনপি-জামায়াতের সূত্র জানায়, ২৮ তারিখ পুলিশ-আওয়ামী লীগের হামলা-গ্রেপ্তার-হয়রানি করার সম্ভাবনা ৮০%।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হামলার যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়ার খবর পেয়েছেন বলেও জানান তারা। তারা মনে করছেন-আওয়ামী লীগ প্রথমে পুলিশ দিয়ে হামলা করবে, তারপর পুলিশের সাথে তারাও হামলায় যোগ দিবে।
মহাসমাবেশকে ঘিরে সিনিয়র নেতাসহ সরব নেতাদের গ্রেপ্তারের আশঙ্কা মাথায় রেখে মহাসমাবেশের আগে থেকেই সর্তকতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। তারপরও যদি কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেপ্তার হন সেক্ষেত্রে বিকল্প নেতৃত্বকে প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রথম সারির নেতারা গ্রেপ্তার হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতারা মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবেন–এমন কৌশল দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করে টিবিএসকে জানান, "আওয়ামী লীগ প্রথমে জামায়াতের সমাবেশে ২৮ তারিখ হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, জামায়াতকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে পারলে সরাসরি বিএনপির সমাবেশেও হামলা করবে।"
তিনি আরও বলেন, জামায়াতকে হামলার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে চায়-বিএনপিকে মানসিকভাবে দূর্বল করতে চায়।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের প্রত্যেক ইউনিটের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করছেন, নির্দেশেনা দিচ্ছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে যেসব নেতারা মনোনয়ন ফর্ম তুলেছেন-তাদের প্রত্যেককে যেকোন মূল্যে ঢাকায় ১০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে ১০ লাখ লোক ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ হাজির করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে তারা। এর জন্য ঢাকার আশেপাশের জেলা গাজীপুর,মানিকগঞ্জ , নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা জেলাতে থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনসমাগম করার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।
সামনে ক্ষমতা, পেছনে কারাগার
সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের দলীয় মিটিংয়ের নির্দেশনায় বলে দেওয়া হয়েছে- "সামনে ক্ষমতা, পেছনে কারাগার" সুতরাং আর পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের যেখানে বাধা দিবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এবারের আন্দোলন 'অবধারিত' লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভয়ভীতি, গ্রেপ্তার, মামলা, রাতের মামলা পরিচালনা—কোনো কিছুই আর আটকে রাখতে পারবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, "এবারের আন্দোলন একটা অবধারিত লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছে এবং সেটা জনগণের বিজয় আনার জন্য।"