নির্বাচনে জিততে চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগ

আগামী জানুযারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে, সরকার পতনে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ঠেকাতে মাঠেও শক্তিশালী অবস্থান গড়তে বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে দলটি।
এছাড়াও সাধারণে ভোটার ও যুবকদের আকৃষ্ট করতে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ব্যাপক উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৬ লাখ কর্মীকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন প্রচারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী ২৬ অক্টোবর অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করবে দলটির কেন্দ্র।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে ৩০০ আসনে এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম প্রায় শেষ দিকে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের মাধ্যমে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া এবং বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবেলায় মাঠে সক্রিয় থাকার সবুজ সংকেত দিয়েছে দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব।
একইসাথে দীর্ঘদিন একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে বিভিন্ন মহানগরী, জেলা, উপজেলাসহ যেসব ইউনিটে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে, সেগুলো নিরসনে কাজ করছেন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নিয়োজিত নেতারা।
কেন্দ্রের নেতারা জানিয়েছেন, ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি নির্বাচন বানচালে এখন বিএনপি-জামায়াত কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে। বিরোধীদের এসব আন্দোলন মোকাবেলা করে মাঠ দখলে রাখার জন্য দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিট পর্যায়ের নেতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নেতারা বলেছেন, নির্বাচনী ইশতেহারকে অংশগ্রহণমূলক ও আকর্ষণীয় করতে এবার প্রথমবারের মতো তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরপরই ৩০০ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে দলটি। এরপর জাতির উদ্দেশ্যে ইশতেহার প্রকাশ করবে আওযামী লীগ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে। এজন্য যতরকম রাজনৈতি প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগ সেগুলো নিয়েছে। ইতোমধ্যে দলের এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী; দলের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে, নৌকার পক্ষে সর্বোচ্চভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।"
মতিয়া চৌধুরী বলেন, "শুধু নির্বাচনী প্রস্তুতি নয়, কোনো রাজনৈতিক দল সংবিধানের বাইরের কোনো দাবীতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে, তা প্রতিহত করে মাঠ দখলে রাখতেও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে আমাদের দল।"
আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রস্তুতির বিষয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের দল নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসাবে দলের যেসব কাজ রয়েছে, সেগুলোও প্রায় শেষের দিকে; যেমন নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন, সরকারের পরিকল্পনা ইত্যাদি।"
"এছাড়া আমাদের দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে একবার আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী ডেকেছিলেন। তিনি সেখানে তাদের সার্বিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার জনপ্রতিধিনিদের সঙ্গেও তিনি বসেছিলেন।" বলেন তিনি।
আবদুর রহমান আরও জানান, "আমাদের নেত্রী ইতোমধ্যে কয়েকটি বিভাগে সমাবেশ করেছেন। অক্টোবরে আরও কয়েকটি জনসভা করার কথা রয়েছে। অক্টোবর ও নভেম্বরে সিলেট, বরিশাল, খুলনায় জনসভা হতে পারে। সুতরাং এ ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আমরা পুরোদমে নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেই আছি।"
দলীয় একটি সূত্র জানায়, এবার নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে, সেই চিন্তা মাথায় রেখে দলের হাই কমান্ড ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদেরকে এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য দলের কেন্দ্র গঠিত একধিক কমিটি স্থানীয় পর্যায়ে বর্তমান এমপি ও নতুন মনোনয়ন প্রার্থীদের বিষয়ে সম্প্রতি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। সে অনুযায়ী তিনি সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্যে থেকে প্রায় ৯০ জনের বিষয়ে নানান অভিযোগ থাকায় তারা মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এসব আসনে নতুন মুখ আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, আগামী মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। আর জানুয়ারির শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, "আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী দল। আমরা চাই একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আমরা আমাদের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে আরও যত বেশি সম্ভব সম্পৃক্ত করতে চাই। এই লক্ষ্য সামনে রেখেই আমরা নানান কর্মসূচি পালন করছি; সাড়াও পাচ্ছি। আমাদের জনসভাগুলো এখন জনসমুদ্র হয়ে যায়। এটা কিন্তু নির্বাচন নিয়ে জনগণের আগ্রহ-উৎসাহের কারণেই হচ্ছে।"
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, "নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমরা জেলা নেতাকর্মীদের বলেছি, ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি করতে। এছাড়া নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কী কী উন্নয়ন করেছেন, সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের অপশাসন এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের চিত্রগুলোও তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ বছরের জুন থেকে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগাঠনিক সম্পাদকরা দলের অভ্যন্তরীণ ছোটখাট কোন্দল নিরসন করছে। এখন দলের কোথাও কোনো কোন্দল নেই। এছাড়াও দলের ভিতরে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড নেতা-কর্মীদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে করে তারা ভোটে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে।
বিএনপি অক্টোবর মাসে সরকার পতনের আল্টিমেটাম দিয়ে বড় কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে, অক্টোবর মাসে বিএনপির সাথে তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল, নভেম্বর সেমি-ফাইনাল আর জানুয়ারিতে ফাইনাল খেলা হবে।
দলটির সাধারন সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, "এই খেলায় জয়লাভ করে জানুযারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে সরকার গঠন করবে এবং শেখ হাসিনাই হবে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী; এর কোনো বিকল্প নেই।"