ঘোষণার ২২ দিন পরও সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম-সবজি
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করলেও ঢাকার কাঁচাবাজারে আগের বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা পর্যায়ে কেজিতে আলুর দাম ৩৫-৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা এবং ডিম প্রতি পিস ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও এ দাম দোকানিরা মানছে না।
দাম বেঁধে দেওয়ার প্রায় ২২ দিন পার হতে চললেও একটি পণ্যও নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। এখন দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। ডিম এখনো প্রতিটি ১২.৫০ টাকা, এছাড়া আলু ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
নির্ধারিত দামে পণ্য কিনতে না পেরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫-৪৫ টাকা। যেটা এখন ১১২.৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮০-৯০ টাকা।
আর আলুর কেজি ছিল এক বছর আগে ২৫ থেকে ৩০ টাকা যেটা ৭২. ৭৩ শতাংশ বেড়ে শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। টিসিবির হিসেবেও উঠে এসেছে সরকার নির্ধারিত দামে আলু ও পেঁয়াজ কিনতে পারছে না ভোক্তারা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোহম্মদ হেলাল বলেন, "সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আমরা পাইকারিতে ৯০ টাকা বিক্রি করছি, গত সপ্তাহে যা ছিল ৮০ টাকা।"
এদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ওঠানামা করছে কাঁচা মরিচের দাম। মগবাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২২০ টাকায়। আর কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি।
বিক্রেতারা বলছেন, এক মাসে কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।
নয়াটোলা এলাকার খুচরা বিক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি দরে তিনি কাঁচা মরিচ কিনেছেন ১৭০ টাকায়।
তিনি ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান।
কারওয়ান বাজারের আরেক বিক্রেতা মিলন হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি জমে কাঁচা মরিচ গাছ মরে যায়। সম্প্রতি বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমেছে।
বর্তমানে বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ বেশি বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি পণ্য কিনতে এসেছেন রাজধানীর নিকেতনের মুদি দোকানি শাহজাহান খান। কেন তারা খুচরা পর্যায়ে সরকারি নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "সরকার তো ক্রেতাদের কাছে আমাদের অপরাধী বানিয়ে দিল।"
"ক্রেতারা এসে বলে সরকারতো বলেছে পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কিন্তু আপনারা বিক্রি করছেন ৯৫ টাকায়। ক্রেতাদের আমরা বোঝাতে পারি না যে, সরকার নির্ধারিত দামে আমরা কিনতেই পারি না।"
তিনি জানান, আলু পাইকারিতে কিনেছেন ৩৮ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা। আর ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭০ টাকা।
"এরপর ভ্যান ভাড়া দিতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। কুলির খরচ আছে। দোকান ভাড়া, নিজের খরচ সব বাদ দিয়ে লাভ তেমন থাকে না। সরকার নির্ধরিত দামে পণ্য পেতে হলে পাইকারিতে দাম কমাতে হবে," বলেন তিনি।
কল্যাণপুরে বাজার করেন মোহম্মদ শাহে আলম। তিনি বলেন, "প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে। আমাদের আয় তো আর বাড়ছে না। আমরা জিম্মি হয়ে গেছি।"
"সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, কোনো পণ্যই সে দামে পাচ্ছি না। দোকানে দিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের কথা বললে দোকানদার বলে সরকার যখন বলেছে তাহলে সরকারে কাছ থেকে কিনে আনুন। এটা কেমন মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না।"