যানজট নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের সড়কে চালু হবে ‘পে-পার্কিং’ ব্যবস্থা

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিনই বাড়ছে যানবাহনের চাপ। তবে সে তুলনায় নেই পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা। ফলে সড়কের উভয়পাশে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এখন নিয়মিত দৃশ্য। লেগে থাকে অসহনীয় যানজট। আর এই যানজটে আটকা পড়ে নষ্ট হয় মূল্যবান কর্মঘণ্টা।
নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে যত্রতত্র পার্কিং ঠেকাতে আগামি কয়েকমাসের মধ্যেই 'পে-পার্কিং' ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এ ব্যবস্থা চালু হলে সড়কের পাশে গাড়ি পার্ক করতে গুণতে হবে টাকা। নির্দিষ্ট মার্ক করা স্থানের বাইরে করা যাবে না পার্কিং। এতে পার্কিং নৈরাজ্য কমার পাশাপাশি নগরীতে যানজটও কিছুটা কমবে বলে আশাবাদী চসিক।
নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা ও কাজীর দেউড়ি এলাকায় পরীক্ষামূলক পে-পার্কিং চালু করতে ইতোমধ্যে যৌথ সার্ভে করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে চসিক ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, বহদ্দারহাট থেকে বারেক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত সড়কের যেসব স্থানে গাড়ি পার্কিং করার পর্যাপ্ত জায়গা আছে সেসব জায়গা চিহ্নিত করে তাতে মার্কিং করে প্রাথমিকভাবে পে-পার্কিং চালু করা হবে। এসব জায়গায় কতগুলো গাড়ি পার্ক করা যাবে তা নির্ধারণে সমীক্ষার কাজ চলছে। সমীক্ষা শেষে সিএমপি'র সাথে সমন্বয় করে এসব পার্কিং স্পেসগুলোকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। দরপত্রের মাধ্যমে এসব পার্কিং জোন তদারকির জন্য ইজারা দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্কিংয়ের জন্য ঘণ্টাভিত্তিক রেট নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তবে রেট কত হতে পারে তা সমীক্ষা শেষে বলা যাবে।
তিনি অরো বলেন, চসিক নির্ধারিত স্থানের বাইরে সড়কের অন্য কোনো জায়গায় গাড়ি পার্কিং করতে দেয়া হবে না। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসার পাশাপাশি যানজট থেকে স্বস্তি মিলবে বলে আশা করছেন এই চসিক কর্মকর্তা।
বাংলাদশে রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) হিসেব মতে, নগরে প্রতিদিন নতুন করে নিবন্ধিত হচ্ছে শতাধিক যানবাহন। চলছে ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা, ৪০ হাজার গাড়ি, সাড়ে তিন হাজার গণপরিবহনসহ লাখ লাখ রিক্সা। তবে নগরীতে বাস ও ট্রাক টার্মিনাল বা হাসপাতাল-স্কুল মার্কেটভত্তিকি পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা নেই বললেই চলে।
এ সংকট নিরসনে চসিক দীর্ঘদিন ধরে পে-পার্কিং ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করলেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপির) আপত্তির কারণে আটকে ছিল এ পরিকল্পনা।
গত রবিবার, চসিক মেয়রের সাথে সিএমপি'র একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর কেটে গেছে সে বাধা।
সিএমপি ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগের উপ-কমিশনার জয়নুল আবেদীন টিটুর মতে, পে-পার্কিং একটি ভালো ও স্মার্ট উদ্যোগ, যদি এটি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়। চসিকের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
তবে, পে-পার্কিংয়ের পাশাপাশি কিছু ফ্রী-পার্কিংও থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়াও যানজট নিরসনে সড়কের পাশে অবস্থিত বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা নিশ্চিতের পাশাপাশি আধুনিক ভার্টিকাল পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে, বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিকল্পিত চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া মনে করছেন, সড়কের পাশে পে-পার্কিং কিছুটা স্বস্তি দিতে পারলেও যানজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদে তেমন একটা সুফল বয়ে আনবে না।
যানজট নিরসন করতে প্রয়োজন অফ দ্য স্ট্রিট পার্কিং বা ভার্টিকাল পার্কিং। এছাড়াও গণপরিবহন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে ব্যাক্তিগত বাহন নিরুৎসাহিত করতে না পারলে নগরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন প্রবীণ এই নগর পরিকল্পনাবিদ।
তিনি আরো বলেন, নগরের শপিংমল, হাসপাতাল, বানিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলোকে বিল্ডিং কোড মেনে পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস রাখতে বাধ্য করতে না পারলে ভবিষ্যতে সংকট আরো বাড়বে।
সুভাষ বড়ুয়া বলেন, বিশ্বের কোনো উন্নত শহররে তুলনায় এই নগররে পার্কিং সংস্কৃতি, পরিকল্পনা বা সুবধিাকে এখনো অনেকটা মান্ধাত্বার আমলের বলা চলে। এমন দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক হাব হতে যাওয়া চট্টগ্রাম তার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবে না এটাই স্বাভাবকি। এখন প্রশ্ন, বেড়ে চলা যানবাহনরে চাপে নাকাল অপরিকল্পিত সড়ক নেটওয়ার্কে পে-পার্কিং পদ্ধতি কতটা স্বস্তি দেবে নগরবাসীকে।