ঘূর্ণিঝড় মোখা: ১২ জেলায় আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত
মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'মোখা'র প্রভাবে দেশের তিনটি সমুদ্র বন্দরের জন্য আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ শুক্রবার (১২ মে) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য এ সংকেত জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এর আগে এ দিন বিকেলে এসব বন্দরের জন্য চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে মোংলা সমুদ্রবন্দরের জন্য এখনো চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি আছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ আট নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ১৩ মে সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০–১৬০ কিলোমিটার হতে পরে বলে জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর–উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৪.৫° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।
মো. মনোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
১৪ মে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, 'গত দুই দিনের পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টির টেকনাফের কিছু অঞ্চলে আঘাত হানার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু শুক্রবারের পূর্বাভাসের হিসাবে, এটি টেকনাফ, কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার বড় একটি অংশের ওপর দিয়ে এগিয়ে যাবে। এছাড়া মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায়ও মোখা'র আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।'
এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক এবং আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০–১৯০ কিলোমিটার গতিবেগে ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রের বেশিরভাগ অংশ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
তার এ পূর্বাভাসটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল অনুযায়ী বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়টি সেন্টমার্টিনে পুরোপুরি আঘাত হানবে, তাই এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আমরা আশঙ্কা করছি সেন্টমার্টিনে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দ্বীপটি প্রচণ্ড হুমকির সম্মুখীন। এ দ্বীপের মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাব।'
তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হওয়ার হুমকির সম্মুখীন।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় এক হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। চাল-বিস্কুটসহ শুকনো খাবার মজুদ রেখেছে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন।
এক হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে নগরী ও জেলায় মোট পাঁচ লাখ এক হাজার ১১০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে জেলা প্রশাসন। সিটি করপোরেশন ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে, যাতে প্রায় এক লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে বলে দাবি সংস্থাটির।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ উপজেলা ছাড়াও নগরীতে ৭৫ হাজার ২০০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।