অর্থনৈতিক মন্থরতায় কমছে কর্মনিয়োজিতদের সংখ্যা
অর্থনৈতিক মন্থরতার কারণে দেশের কর্মনিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৩ (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কৃষি, শিল্প এবং সেবাসহ সব খাতেই কর্মনিয়োজিত জনগোষ্ঠী কমেছে।
ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কর্মনিয়োজিত জনগোষ্ঠী কমে হয়েছে ৭১.১০ মিলিয়ন। যা এর আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ৭১.৫৩ মিলিয়ন।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে কৃষিতে [যা মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৪৫%] কর্মসংস্থান কমে হয়েছে ৩১.৯৪ মিলিয়ন। এর গত বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ৩২.০৮ মিলিয়ন।
এ বিষয়ে জানতে ব্যাখ্যা করে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "২০২৩ সালের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সরকারি বেসরকারি সব ধরণের প্রজেক্টশনই বলছে অর্থনীতি মন্থরতার দিকে যাচ্ছে।"
"মূল্যস্ফীতির হার বেশি, বিশ্ববাজারে মন্দার প্রভাব দেখা যাচ্ছে , রপ্তানি অর্ডারগুলো দুর্বল, বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে আমদানি করা যাচ্ছে না," বলেন তিনি।
এসব কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে। সেটার প্রভাব দেখা যাচ্ছে শ্রম শক্তি জরিপে।
জরিপে বলা হয়েছে, একই সময়ে বেকারত্বের কমেছে। এতে দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ এর তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে বেকারত্বের হার ৪% থেকে কমে ৩.৫১% হয়েছে।
বিবিএস বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকারে সংখ্যা ২.৫৯ মিলিয়ন, যা এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২.৯৫ মিলিয়ন।
জাহিদ হোসেন ব্যাখ্যা করেন, কর্মনিয়োজিত এবং বেকার উভয় ব্যক্তির সংখ্যা একইসাথে কমতে পারে যদি বেকাররা শ্রমবাজার থেকে সরে দাঁড়ায়।
কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে আসছে, যার কারণে বেকাররা চাকরি খুঁজছেন না- বলেন তিনি।
বিডসের সাবেক ডিরেক্টর ড. মোস্তফা কামাল মুজেরী বলেন, "গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে যে জনগোষ্ঠী কাজে নিয়োজিত ছিল, তাদের অনেকে হয়তো বিভিন্ন কারণে শ্রমবাজার থেকে বের হয়ে এসেছে, এ কারণে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এবং বেকারের সংখ্যা একইসঙ্গে কমছে।
তবে জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালের শেষ ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে বেকারের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। আগের ত্রৈমাসিকে ২.৩২ মিলিয়ন বেকারের রেকর্ড করা হয়।
জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, "বছরের জানুয়ারি থেকে প্রথম প্রান্তিকে আমাদের দেশে কৃষিখাতে কাজ কিছুটা কমে যায়। ডিসেম্বরের মধ্যে রবি ফসল কাটা শেষ হয়ে যায়। এরপরে বিশেষ করে কৃষি কাজে নিয়োজিত অনেক মানুষ কিছুদিনের জন্য বেকার থাকে।"
কমেছে মোট শ্রম শক্তি
বিবিএসের জরিপে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে মোট শ্রমশক্তি কমে হয়েছে ৭৩.৬৯ মিলিয়ন। গত বছরের একই প্রান্তিকে শ্রমশক্তি ছিল ৭৮.৪৮ মিলিয়ন।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, পুরুষ শ্রমশক্তি ৪৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৪৮.২৫ মিলিয়ন হয়েছে। কিন্ত একই সময়ে নারী শ্রমশক্তি ২৬.৪৮ মিলিয়ন থেকে কমে ২৫.৪৪ মিলিয়ন হয়েছে।
আবার মোট কর্মনিয়োজিত নারীর সংখ্যা ২৫.২১ মিলিয়ন থেকে কমে ২৪.৫৬ মিলিয়ন হয়েছে। যদিও কর্মে নিয়েজিত পুরুষের সংখ্যা এই সময়ে বেড়েছে। কর্মনিয়োজিত পুরুষের সংখ্যা ৪৬.৩২ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৪৬.৫৪ মিলিয়ন হয়েছে।
এদিকে বিবিএসের জপির অনুযায়ী, পুরুষ বেকারের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে নারী বেকারের সংখ্যা। এই সময়ে নারী বেকারের সংখ্যা ১.২৭ মিলিয়ন থেকে কমে হয়েছে ০.৮৮ মিলিয়ন আর পুরুষ বেকারে সংখ্যা ১.৬৮ মিলিয়ন থেকে সমান্য বেড়ে হয়েছে ১.৭১ মিলিয়ন।
বিবিএসের তথ্য থেকে জানা গেছে, এসময়ে শিল্প ও সেবা খাতে কর্মনিয়োজিত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১২.২৫ মিলিয়ন এবং ২৬.৯১ মিলিয়ন।
আগের বছরের একই সময়ে এই পরিসংখ্যান ছিল যথাক্রমে ১২.৩০ মিলিয়ন এবং ২৮.৩৮ মিলিয়ন।
শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারীর হার কমেছে
বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী হার ৬১.৭৬% থেকে কমে হয়েছে ৬১.৩৭%।
এদিকে শ্রমশক্তি অংশগ্রহণকারী পুরুষের হার বাড়লেও কমেছে নারীর হার।
এই সময় শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী নারীর হার ৪৩.৩% থেকে কমে ৪১.৯৫% হয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ৮০.৭৪% থেকে বেড়ে হয়েছে ৮১.১৭%।