মেঘনা গ্রুপের বহরে যুক্ত হলো নতুন ৪টি বাল্ক ক্যারিয়ার
দেশের মেরিটাইম খাত বিপুল সম্ভাবনাময় এবং সরকার সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আগ্রহী বলে উল্লেখ করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে মেঘনা গ্রুপের চারটি নতুন জাহাজের (বাল্ক ক্যারিয়ার) উদ্বোধনকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার স্থানীয় নৌপরিবহন খাতকে আরও ব্যবসা-বান্ধব করতে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের পদক্ষেপের কারণে মেঘনা গ্রুপ গত ১১ বছরে তাদের বহরে ২২ টি জাহাজ যুক্ত করেছে। এই খাতে আরো বিনিয়োগ অংশীদারী বাড়াতে কাজ করছে সরকার। দক্ষ নাবিক তৈরি করতে মেরিন একাডেমির সংখ্যা একটি থেকে চারটিতে উন্নীত করা হয়েছে; আরও চারটি ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউট তৈরি করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন নির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে প্রথমবারের মতো ২০০ মিটার দৈর্ঘের জাহাজ ভিড়ানোর মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে মেঘনা গ্রুপের জাহাজ মেঘনা ভিক্টরি। রোববার উদ্বোধন করা অন্যান্য জাহাজগুলো হলো, এমভি মেঘনা প্রেস্টিজ, মেঘনা হোপ এবং মেঘনা প্রোগ্রেস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৫ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয় দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের মাধ্যমে। শতভাগ পণ্য দেশীয় জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫০০ জাহাজ। এর বিপরীতে গত ৪ বছরে দেশের নৌবহরে থাকা জাহাজের সংখ্যা ৩৮ থেকে বেড়ে ৯৫টিতে দাঁড়িয়েছে।
"ভবিষ্যতে আমরা দেশীয় কোম্পানির জাহাজেই বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির শতভাগ পণ্য পরিবহন করতে সক্ষম হবো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যও পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো," যোগ করেন তিনি।
এছাড়া, সম্প্রতি বিদেশি জাহাজে পণ্য পরিবহন নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা দ্রুতই সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
সভাতির বক্তব্যে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ভাড়া প্রদান করতে হয়। এর আগে এই ভাড়ার বেশিরভাগই পরিশোধ করতে হতো বিদেশি জাহাজ কোম্পানিগুলোকে। তবে এখন এসব দেশীয় জাহাজে পণ্য পরিবহনের কারণে ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে।
তিনি জানান, নতুন ৪টিসহ মেঘনা গ্রুপের বহরে থাকা জাহাজগুলো দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিকাশে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরো বলেন, জাহাজ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের আরো কিছু নীতিগত সহযোগিতা প্রয়োজন। এজন্য জাহাজের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কল সাইন, স্টেশন লাইসেন্স সহজ প্রাপ্তির জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করা যেতে পারে। জাহাজ ক্রয়ে ১ শতাংশ এআইটি (এডভান্স ইনকান ট্যাক্স) প্রত্যাহার, জাহাজ ক্রয়ের তিন বছরের মধ্যে পুনরায় বিক্রয় করতে না পারার শর্ত প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোঃ নিজামুল হক।
বক্তব্য রাখেন আল হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব উর রহমান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম।
মেঘনা গ্রুপ জানায়, জাহাজ চারটির জন্য ৭১ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছে এইচএসবিসি বাংলাদেশ। এছাড়া, জাপান ও চীনের জিয়াংসু ইয়াংজি-মিতসুই শিপবিল্ডিং কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে এই বাল্ক ক্যারিয়ারগুলো।
প্রতিটি জাহাজের ধারণক্ষমতা ৬৬ হাজার ডেডওয়েট টনেজ।