শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘ হলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বোরোর বীজতলা, আলুচাষ
দেশব্যাপী বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে দিন-রাতের তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় ফসলের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে দীর্ঘমেয়াদে কম তাপমাত্রা বজায় থাকলে ধান ও আলুর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশেই এখন বোরো ধানের বীজতলায় চারা বড় হচ্ছে, কোথাও কোথাও তা রোপণের উপযোগী হয়ে গেছে। এই অবস্থায় চারার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কৃষকদেরকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছে।
এসব পরামর্শের মধ্যে বলা হয়েছে, শৈত্যপ্রবাহের সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে। যদি শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘ হয় তবে তা দিনে ও রাতেও ঢেকে রাখতে হবে।
বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে নলকূপের পানি ব্যবহার করতে পারলে ভালো। তবে এই পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং পাতায় যে শিশির আটকাবে সেটাও ঝরিয়ে দিতে হবে। বীজতলায় কোন কারণে চারা হলুদ হয়ে গেলে সেখানে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া জমিতে রোপণের জন্য কমপক্ষে ৩৫-৪০ দিনের চারা ব্যবহার করতে হবে। এ বয়সী চারা রোপণ করলে শীতে চারার মৃত্যুহার কমে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষক রুবেল হোসেন বলেন, 'চারা প্রস্তুত হয়ে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে রোপণ শুরু হবে। এখনো চারার সমস্যা হয়নি। এই ঠান্ডা বেশিদিন থাকলে ধান রোপণ করলে সেটা অনেক সময় মরে যেতে পারে।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস টিবিএসকে বলেন, 'আমরা পরামর্শগুলো মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদেরকে দিচ্ছি, তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।'
ধানের পাশাপাশি মাঠে থাকা আলুর চাষাবাদেও তীব্র শীতের প্রভাব পড়তে পারে। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো কোন সমস্যা হয়নি। তবে ঠান্ডা দীর্ঘমেয়াদী হলে তার প্রভাব পড়তে পারে, আলুর পাতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো রোপণের জন্য ০.৩৮ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।
বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিসার আল মোজাহিদ সরকার বলেন, 'ঠান্ডাটা দীর্ঘ হলে তা আলুর ফলনের উপর প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য কৃষকদেরকে কিছু মেডিসিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে পাতা নষ্ট হওয়া বা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত না হয়। কারণ আর মাসখানেকের মধ্যেই আলুর মূল ফলন উঠতে শুরু করবে।'
এদিকে চলমান শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে আবহাওয়াবিদরা শঙ্কার খবরই দিচ্ছেন। কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক এবং আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ টিবিএসকে জানান, ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির পরে ১৮ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আবারও ১ সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী কুয়াশা ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মাঠে এখন নানা ধরনের সবজি ও ভুট্টা রয়েছে। এই ফসলগুলোতে শীতের কারণে খুব বেশি সমস্যা হয় না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৯ ডিগ্রি ও যশোরে ১০ ডিগ্রি। বেশিরভাগ স্থানেই এটি ১০-১৫ ডিগ্রির মধ্যে বিরাজ করছে। এই অবস্থা এখনই পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ কম। নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।