মার্চ থেকে নলকূপের পানির মূল্যও আদায় করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা
ঋণ পরিশোধের বোঝা কমাতে রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী মার্চ থেকে গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলনের ওপর শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)।
ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে নিরুৎসাহিতকরণ এবং পানির উপর সম্পূর্ণ অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি সংস্থাটির। এ লক্ষ্যে ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত তাদের শেষ বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নলকূপ থেকে উত্তোলিত পানির প্রস্তাবিত মূল্য আবাসিকের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা। আর অনাবাসিকে ১২ টাকা ৩৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্য কারো পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ইত্যাদি নিষিদ্ধ। কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি, কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারাধীন এলাকায় সুপেয় পানি সংগ্রহ, শোধন, পাম্পিং, সঞ্চয় বা সরবরাহ করার অথবা পয়ঃসংগ্রহ, পাম্পিং ও পরিশোধনের জন্য কোন সুবিধাদি নির্মাণ বা সংরক্ষণ করতে পারবে না।
এই ক্ষমতাবলে চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির উল্লেখিত মূল্য নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। পানির এই বাড়তি মূল্য আগামী বছরের ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার অনুমোদিত মোট ৪ হাজার ৮১০টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ৩৪১টি আবাসিক ও এক হাজার ৪৬৯টি অনাবাসিক।
এতোদিন অনুমোদন নিয়ে এসব নলকূপের জন্য বছর বছর নবায়ন ফি আদায় করতো সংস্থাটি। আগামী বছর থেকে এসব নলকূপেও মিটার স্থাপন করে পানির মূল্য আদায় করবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ বর্তমানে ৭৮ হাজার ৫৪২টি এবং বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। পানির দৈনিক উৎপাদন ৪৫ থেকে ৫০ কোটি লিটার, চাহিদাও সমান।
চট্টগ্রাম ওয়াসার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, ৫০-৬০টি ফ্ল্যাট আছে এমন এপার্টমেন্টে ওয়াসার সংযোগের মাসিক বিল আসে ৫০০-১০০০ টাকা।
ওয়াসার কর্মকর্তারা ইনসপেকশনে গিয়ে দেখতে পায়, সেখানে নলকূপও রয়েছে। মিটার পরিদর্শকদের সহায়তায় তারা নলকূপ দেখিয়ে ওয়াসার বিল কম দেয়। এছাড়া ভূর্গভস্থ পানির বিষয়টিও সামনে আনা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার কাঁধে ঋণের বোঝাও বড়। গত এক যুগে পানির সরবরাহ বাড়াতে প্রায় ৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সংস্থাটি। এসব প্রকল্পের বড় অংশের অর্থায়ন হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার ঋণে।
বিদেশি তিন সংস্থা থেকে চার প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী এসব ঋণের জন্য প্রায় ৬২৮ কোটি সুদ পরিশোধ করতে হবে সংস্থাটিকে।
আগামী বছর থেকে ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য কিস্তি শুরুর কথা রয়েছে। দাতা সংস্থার ঋণগুলো আমাদের হয়ে সরকার পরিশোধ করবে।
তবে, সংস্থাটিকে ১ শতাংশ হারে সুদে সরকারকে পরিশোধ করতে হবে ধীরে ধীরে।
এই পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধে আয় বাড়ানোর বিকল্প দেখছে না সংস্থাটি। চট্টগ্রাম ওয়াসার আয়-ব্যয় প্রায় সমান। বছরে সংস্থাটির আয় ১৭০ থেকে ১৮০ কোটি টাকা। আর ব্যয় ১৬০ থেকে ১৭০ কোটি টাকা।
২০২০ সালে ১৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় হয়েছে সংস্থাটি। আর ব্যয় ছিল ১৬৫ কোটি টাকা। পানি সরবরাহ, নলকূপের লাইসেন্স, এফডিআরের সুদ ছাড়া তেমন কোন আয়ের উৎস নেই চট্টগ্রাম ওয়াসার। এর বাইরে পানির মূ্ল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় বাড়াতে পারে সংস্থাটি। এ নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে।
সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে মূল্য বৃদ্ধি করে আবসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির মূল্য ১৩ টাকা ২ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ৩১ টাকা ৮২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, বছরে ৫ শতাংশ হারের বেশি পানির মূল্য বাড়াতে পারবে না সংস্থাটি। ফলে আয়-ব্যয় সমান নিয়ে ঋণের চাপে পড়ছে সংস্থাটি।
অপরদিকে উৎপাদিত ২৮-৩০ শতাংশ পানি সিস্টেম লস হিসেবে অ-রাজস্বভুক্ত পানি দেখানো হয়। হিসেবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা অপচয় হয় এ খাতে। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প উৎস থেকে আয় বাড়ানো ছাড়া উপায় দেখছে না সংস্থাটি।
এ বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বোর্ড সদস্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে নিরুৎসাহিতকরণ এবং পানির উপর সম্পূর্ণ অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানর লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।"