৯৪.৫ শতাংশ সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ
সংযোগ সড়ক ও ইন্টারসেকশনসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো শেষ না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। এজন্য চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এরইমধ্যে এটি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে পাস হয়ে একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) উঠার অপেক্ষায় রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত টানেলের ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজের অধিকাংশই ইলেকট্রো-মেকানিকাল কাজ। এসব কিছু শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অপারেশনাল কাজ শতভাগ হলেই টানেলে গাড়ি চলাচল করতে পারবে।'
তবে টানেলটি কখন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সে সম্পর্কে বলতে রাজি হননি প্রকল্প পরিচালক। যদিও প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে টানেলের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের একজন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেছেন, 'নভেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেলের অন্তত একটি টিউব যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা ছিলো সরকারের। তবে এখন পর্যন্ত টানেলের কেবল কানেকশন, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, লাইটিংসহ ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল ওয়্যার্সের অনেক কাজ চলমান।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের একটি টিউবের পূর্তকাজের সমাপ্তি হয় গত ২৬ নভেম্বর। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস টানেলটি পরিদর্শন করে জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের প্রথম এ টানেলটি আগামী জানুয়ারিতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
এর আগে গত ২৯ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রথম টিউব অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।' একই টানেলের দ্বিতীয় টিউব ডিসেম্বরে খুলে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, 'পূর্ত কাজ সম্পন্ন হলেও টানেল হয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে আরও পরে। টানেলের দক্ষিণ টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম শহরে এবং উত্তর টিউব দিয়ে চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমির দিক থেকে আনোয়ারার দিকে যান চলাচল করবে। গতিশীল ইন্টারসেকশন নির্মাণের জন্য গঠিত কমিটি একাধিক ডিজাইন প্রস্তুত করেছে। সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পর এসবের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।।'
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের কাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের কাজ উদ্বোধন করেন।
২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। পরবর্তী সময়ে একই বছর প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা করা হয়। ওই সময়ে মেয়াদ ২০২০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২২ সাল করা হয়। সর্বশেষ দ্বিতীয় সংশোধনীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।
চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টানেল। এ প্রকল্পে ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
কর্ণফুলীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে 'ওয়ান সিটি টু টাউন' গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।