মোলার প্রেগন্যান্সি রোগীদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে শুরু হচ্ছে ওষুধের ট্রায়াল
মোলার প্রেগন্যান্সিতে ভোগা নারীদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে দেশে প্রথমবারের মতো প্রচলিত একটি ওষুধ ব্যবহারে ডাবল-ব্লাইন্ড ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হতে যাচ্ছে।
মোলার প্রেগন্যান্সি হলো, এক ধরনের অস্বাভাবিক গর্ভাবস্থা; যখন ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পরেও গর্ভে শিশুর বিকাশ ঘটে না, সে অবস্থাকে বল হয় মোলার প্রেগন্যান্সি। এটি গর্ভবতী নারীদের মধ্যে অসুস্থতা ও মৃত্যুর অন্যতম কারণ। প্রতি হাজারে ৭.৩ জন নারী এই জটিলতায় ভোগেন; এটি গর্ভাবস্থায় ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।
গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (জিওএসবি) এর বাংলাদেশ গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল গ্রুপ (বিজিসিটিজি) মোলার প্রেগন্যান্সি জটিলতা রোধে প্রচলিত একটি ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। ট্রায়ালের জন্য বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ৫০০টি ইনজেকশন মেথোট্রেক্সেট (৫০ এমজি) এবং ৫০০টি প্লাসিবো সরবরাহ করবে।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকা ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের কাছে ইনজেকশন ও প্লাসিবো হস্তান্তর করে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেডের ক্যান্সার সেন্টারের সমন্বয়ক ও এই ট্রায়ালের ইনভেস্টিগেটর অধ্যাপক সাঈদ আকরাম হুসাইন বলেন, প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল- এই তিন হাসপাতালের ৫০০ রোগীর ওপর ট্রায়াল শুরু হবে।
পরবর্তীতে দেশের আটটি হাসপাতালে আরও ২ হাজার রোগীর ওপর এ ট্রায়াল পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।
অধ্যাপক সাঈদ আকরাম হুসাইন বলেন, "একটি প্রিভেন্টিভ স্টাডি হতে যাচ্ছে। অল্প দামের একটি ওষুধ দিয়ে এটি শুরু হবে। শিগগিরই আমরা ট্রায়ালের কাজ শুরু করতে পারবো। এ ট্রায়াল দুই বছর চলবে।"
অনুষ্ঠানে বরেণ্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ টিএ চৌধুরী বলেন, ডাবল ব্লাইন্ড রিসার্চের নিয়ম অনুযায়ী কাকে ওষুধ ও কাকে প্লাসিবো দেওয়া হয়, তা ডাক্তার বা রোগী কেউ জানতে পারেনা। ডাক্তার ও রোগী দুজনই এ বিষয়ে অজ্ঞ থাকবেন।
"ফলাফল কী হবে, যারা গবেষণার কাগজ মূল্যায়ন করবেন, তারাই জানবেন। এই পদ্ধতিটি রিসার্চের মানদণ্ডে সবচেয়ে উচুতে," যোগ করেন তিনি।
এ ধরনের রিসার্চ দেশে খুব কম ইনস্টিটিউটে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এ ধরনের রিসার্চে যে ম্যানপাওয়ার বা জনশক্তি এবং সহায়তা লাগে, তা আমাদের তেমন নেই। আমাদের নিজেদের লোকজন দিয়ে এ ধরনের একটি রিসার্চ হতে যাচ্ছে; আমাদের জন্য এটি সত্যিই গৌরবের। এটি ঠিকমত শেষ হলে দেশের জন্য উদাহরণ হবে।"
"যারা ডেটা সংগ্রহ করবেন, তাদের সিনসিয়ারিটির ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। রোগীকে ঠিকমত মনিটর করতে হবে," বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিকন ফার্মার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মাহমুদুল হক পল্লব কিনিক্যাল ট্রায়ালটি সর্বোত্তম মানসম্মতভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইনজেকশন এবং প্লাসিবো হস্তান্তর করেন। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, এর মাধ্যমে গর্ভবর্তী মায়েদের ক্যান্সার ও মৃত্যু ঝুঁকি আগের তুলনায় হ্রাস পাবে।