মিরপুরে ৭০ কাঠা জমিতে খেলার মাঠ হবে: মেয়র আতিক
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিরপুর ১১-এর প্যারিস রোড মোড়ের কালার বস্তি হিসেবে পরিচিত প্রায় ৭০ কাঠার খোলা জায়গাকে খেলার মাঠ তৈরী করার ঘোষণা দিয়েছেন উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। যদিও ১৯৯৬ সালে জায়গাটি আবাসিক প্লট আকারে বরাদ্দ দেয় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
এ ঘোষণায় এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খুশি হলেও ক্ষোভ জানিয়েছেন এ জমির দাবিদার ৩২ মালিক।
গত কয়েকদিন ধরে 'প্যারিস রোড মাঠ পুনরুদ্ধার কমিটি' ব্যানারে ঢাকা উত্তর সিটির ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী জহিরুল ইসলাম মানিকের নেতৃত্বে এ স্থানটিতে মাঠের দাবিতে আন্দোলন করছে এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার মেয়র আতিকুল ইসলাম প্যারিস রোডে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসে অনশনকারীদের সাথে কথা বলে তাদের দাবির সাথে সংহতি জানান এবং অনশন ভাঙ্গান।
এসময় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ৩নং ওয়ার্ডের আওতাধীন মিরপুর ১১ এলাকায় প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এই এলাকায় ৬০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ এই অঞ্চলে খেলার মাঠ নেই। জনগণের স্বার্থে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই খেলার মাঠ পুনরুদ্ধার করবো।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে বরাদ্দ নেওয়া জমির মালিকরা বলছেন, ১৯৯৬ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লটারির মাধ্যমে ৩২ জনকে প্রায় ৭০ কাঠা জমি দেওয়া হয়। এতো বছর ধরে প্রত্যেকে নির্ধারিত প্রতি মাসে প্রায় ১৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে আসছেন এবং সর্বশেষ তাদের ১৫ জনের নামে কাগজপত্রও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারা দখলে যেতে পারেনি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলছে, এ জায়গাটি ১৯৬৫ সালের পরিকল্পনা ও সদ্য প্রকাশিত মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় খোলা জায়গা হিসেবে দেখানো হয়েছে। যদি এখানে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ প্লট বরাদ্দও দিয়ে থাকে তবে সিটি কর্পোরেশন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মিলে প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের বিকল্প বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
জানা যায়, মিরপুরের এ মাঠটি ১৯৬৫ সালের পরিকল্পনায় খোলা জায়গা হিসেবে রাখা ছিলো। যা বস্তিতে রূপান্তর হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ জায়গাটি ৩২টি আবাসিক প্লটের জন্য বরাদ্দ দেয়। কিন্তু এখানে মালিকরা কখনো বাড়ি করতে গেলেই বস্তিবাসীরা মামলা করেন।
প্লট মালিকরা জানান, ২০১৬ সালে রায় পাওয়ার পর আদালতের আদেশে বস্তি উচ্ছেদ হলেও তারা আর কখনোই বাড়ি করতে পারেন নি।
একটি প্লটের মালিক আসলাম পারভেজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এ জমি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের এবং তা ১৯৯৬ সালে লটারির মাধ্যমে ৩২ জন মালিক পান। ২০০২ সালে এ জমি ৩২ জন মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং তখন এখানে থাকা বস্তিবাসী তাদের দখলে যেতে দেয়নি এবং বস্তিবাসী হাই কোর্টে রিট করেন ন্যাশনাল হাউজিং এর বিরুদ্ধে। পরে ২০১৩ সালে হাউজিং সোসাইটি এ জমি বুঝে পায় এবং বস্তি তুলে দেয়। ২০১৬ সালে এক শুনানির পরে ৩২ জন মালিককে এ জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু আমরা বেশ কয়েকবার দখলে যেতে চাইলেও তারা দখলে যেতে পারিনি।
তিনি বলেন, "আমরা দখলে গেলেই স্থানীয় কাউন্সিলর ও তাদের লোকজন আমাদের বারবার বাধা দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ৭ তারিখ আমরা আমাদের প্লটে লোকজন নিয়ে কাজ করতে গেলে স্থানীয় কাউন্সিলর এসে বাধা দেন এবং বলেন 'এখানে কাজ করতে হলে আমার অনুমতি লাগবে'।"
আরেকটি প্লটের মালিক মো. ফরিদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "আমাদের ১৫ জনের জমি ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে কিন্তু আমরা দখলে যেতে পারছি না। আমরা মেয়রের কাছে আগে একবার চিঠিও দিয়েছিলাম কিন্তু সেটি হয়তো মেয়র মহোদয় পর্যন্ত পৌঁছায়ই নাই। বৃহস্পতিবার হঠাত করে এসে মেয়র মহোদয় মাঠের ঘোষণা দিলেন, আমরা কিছুই জানি না।"
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (ন্যাশনাল হাউজিং সোসাইটি) এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কাউছার মোর্শেদ টিবিএসকে বলেন, "এ জমি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের থেকে ৩২ জন মালিক প্লট হিসেবে পেয়েছেন। এখানে কোনো মাঠ কিংবা খালি জায়গা দেখানো হয়নি। সেটি থাকলে প্লট বরাদ্দ সম্ভব ছিল না।"
উত্তর সিটির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাশেম বলেন, "এটি যেহেতু আগে থেকেই পরিকল্পনায় খোলা জায়গা হিসেবে দেখানো ছিলো সেহেতু ২০০১ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনানুযায়ী এখানে আবাসিক প্লট কোনোভাবেই করা যাবে না।"
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "আমাদের সিটিতে এমনিতেই খেলার মাঠ, পার্ক নেই। আরও মিরপুর ১১ এর ঐ স্থানে আর কোনো খালি জায়গা নেই। ড্যাপে যেহেতু খালি জায়গা দেখানো হয়েছে সেহেতু এ স্থানটিতে ভবন করতে দেওয়া হবে না। আমি ঐ এলাকার শিশুদের কথা দিয়েছি তাদেরকে এ স্থানে মাঠ তৈরী করে দেওয়া হবে। যদি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সেখানে প্লটের বরাদ্দ দিয়েও থাকে তবে সে জায়গা তাদের অন্য কোথাও দেওয়া হোক। দরকার হলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।"