ঋণ খেলাপি মামলা, স্ত্রীসহ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ঋণ খেলাপি মামলায় স্ত্রী সহ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাট কে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
ওয়ান ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার দায়ের করা মামলায় বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এই আদেশ দেন।
অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারি মো. রেজাউল করিম বলেন, মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্সের প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাঈদ ফুডস লিমিটেডের কাছ থেকে ৮৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে ২০১৫ সালে অর্থঋণ মামলা দায়ের করে ওয়ান ব্যাংক।
রেজাউল করিম টিবিএসকে বলেন, "ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ (বুধবার) শুনানি শেষে বিচারক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সালমা সাঈদ চৌধুরীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।"
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৬০ কোটি টাকা।
এক সময়ের ছাতা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ছিদ্দিক ট্রেডার্স। চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সিংহভাগ ছাতার চাহিদা মেটাতো এই প্রতিষ্ঠান।
ছাতা ব্যবসার পাশাপাশি ২০০৭ সালের দিকে খাতুনগঞ্জে ভোগ্য পণ্য ব্যবসা শুরু করে ছিদ্দিক ট্রেডার্সের বর্তমান কর্ণধার আবু সাঈদ। মূলত বাবার প্রতিষ্ঠিত ছিদ্দিক ট্রেডার্সের সুনামকে পুঁজি করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নেয় আবু সাঈদ।
খাতুনগঞ্জের প্রবেশমুখ টেরিবাজারে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় হওয়ায় এবং পৈত্রিক ব্যবসার সুনামের কারণে ভোগ্য পণ্য ব্যবসায় উদার হস্তে ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো।
কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও ব্যাংকের সেই ঋণের টাকা ফেরত দেয় নি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার। বর্তমানে ছিদ্দিক ট্রেডার্সের কাছে ১৫ ব্যাংকের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া ভোগ্য পণ্য আমদানির ব্যবসা ও ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসেই ঋণের এই টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত ছিদ্দিক ট্রেডার্সের কাছে অগ্রণী ব্যাংক লালদীঘী শাখার ২৫০ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার ৭২ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার ৬১ কোটি টাকা, ব্রাক ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ১১৩ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা ৮৭ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের লালদীঘী শাখার ৭৬ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক আন্দরকিল্লা শাখার ৪৯ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার ৪১ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার সাড়ে ২১ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া খাতুনগঞ্জ শাখার সাড়ে ১২ কোটি টাকা, ইউসিবিএল আন্দরকিল্লা শাখার ১২ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার ১১ কোটি টাকা, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক সিডিএ শাখার সাড়ে ৬ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ৬ কোটি টাকা ছাড়াও ঢাকা ব্যাংক জুবলী রোড শাখার পাওনা ছিল।
সুদাসলে এই পাওনা বেড়ে বর্তমানে দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ঋণের টাকা আদায়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পাওনাদার ব্যাংক ছিদ্দিক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবু সাঈদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
অর্থঋণ আদালত ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চেক ডিজনার (এনআই অ্যাক্ট) মামলা দায়ের করেছে বিভিন্ন ব্যাংক।