পণ্য খালাসে বিলম্বের জন্য এনবিআর, কাস্টমসের 'অদক্ষতা' দায়ী: ব্যবসায়ীরা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ কাস্টমসের মতো সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতার জন্যই চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অংশীদারেরা।
তারা বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ চালান পরিচালনায় দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন তবে অন্যান্য পরিষেবা প্রদানকারীরা সংস্থাগুলো প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে দৈনিক ইত্তেফাকের আয়োজনে 'দেশীয় বিনিয়োগে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এমন আভিযোগ করেন।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, "পোর্ট এখন ২৪ ঘণ্টাই সেবা দিচ্ছে। যদিও এনবিআরের শনিবারও পোর্টে অফিস খোলা রেখে কাজ করার কথা কিন্তু তারা সেটা করছে না। তাদের জন্য পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে।"
এছাড়া পোর্টে কোন টেস্টিং ল্যাব না থাকার কারণে ঢাকায় বিএসটিআই-তে পণ্যের পরীক্ষা করে রিপোর্ট এনে পণ্য খালাস করতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয় বলে তিনি যোগ করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক ও পোর্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধান অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, "শুধু পোর্ট একা সেবা দিলে হবে না। এনবিআর ও কাস্টমসকেও সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।"
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন করতে হলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নও জরুরি।"
অফ-ডক নির্মাণসহ চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি মনে করেন, দেশিদের পাশাপাশি বিদেশি অপারেটররা এখানে এলে দেশীয় অপারেটররা যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি বন্দরও সমৃদ্ধ হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, "সমুদ্রপথে দেশে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ৯৩ শতাংশই হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আর কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৯৮ শতাংশ।"
"চাপ সামাল দিতে বন্দরে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু হয়েছে। সেবার মান বেড়েছে, কমে এসেছে জেটি ও বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের সময়।"
"তবে অপ্রতুল ও পুরোনো জেটিগুলো বেশিদিন ব্যবহারের সুযোগ নেই। জেটি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন টার্মিনাল নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া পণ্য খালাস ব্যবস্থাপনায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নীতি-সহায়তা প্রণয়ন করতে হবে", তিনি যোগ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "২০২৬-২৭ সালের মধ্যে অন্য একটি মেরিটাইম সেক্টরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বন্দর এখন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকছে। বন্দরের জট কমাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।"
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ যাতে আসে সে জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।