উত্তেজনার পর ইস্কাটনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বিএনপির
দিনভর সংঘর্ষের টানটান উত্তেজনা থাকলেও মঙ্গলবার শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে বিএনপির জনসভা।
গত সোমবার রাজধানীর হাজারিবাগে বিএনপি-সংঘর্ষের পরদিন মঙ্গলবার নিউ ইস্কাটনের এ জনসভা ঘিরে বেশ উত্তাপ ছড়ায়। সমাবেশস্থলে আওয়ামী লীগকে সোমবার সন্ধ্যায় একটি মিছিল করতেও দেখা যায়। কিন্ত সমাবেশের সময় আশেপাশে আওয়ামী লীগ কে দেখা যায়নি। ফলে শেষ সব পর্যন্ত কোন ধরণের সংঘর্ষ ছাড়াই শেষ হয়েছে বিএনপির এ সমাবেশ।
বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও দুপুর একটা থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। এসময় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর হাতে রড, লাঠি, বাঁশ, পাইপ দেখা যায়; এসব তারা আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য হামলার মোকাবিলা ও আত্মরক্ষার্থে এনেছেন বলে দাবি করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে আশেপাশে সতর্ক অবস্থায় ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
দলের চার নেতা হত্যা, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়াবৃদ্ধি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন বিএম ফাউন্ডেশন স্কুলের পাশে ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে তেজগাঁও জোন এ জনসভার আয়োজন করেন।
বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকে সমাবেশে বলতে শোনা যায়- 'যদি আওয়ামী লীগ আর সমাবেশে হামলা চালায়, তাহলে গত সোমবার হাজারিবাগে যেভাবে লাঠি দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতিহত করেছেন, আগামীতে এমন পরিস্থিতি আরও বেশি বেশি চলবে। প্রতিদিনই লাঠি নিয়ে আসবেন।'
সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'আমাদের যেখানে মন চায় মিটিং করার, আমরা সেখানেই মিটিং করবো, কোন বাধা দিয়ে কাজ হবে না। এ সরকারের টিকে থাকা সম্ভব না, টিকে থাকার সম্ভাবনা আর নাই। যে বন্দুক দিয়ে আমাদের গুলি করেছেন, সময়মতো সেই বন্দুক আপনাদের দিকে ঘুরে যেতে বেশি সময় নেই।'
মির্জা আব্বাস বলেন, 'এতো বছর ক্ষমতায় থাকতে হবে কেন? লুটপাট করার জন্য? রাশিয়া থেকে গম কিনছেন সেখানেও মধ্যসত্ত্বভোগীদের দিয়ে দুর্নীতি করছেন, যার জন্য জনগণকে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে গম কিনতে হবে। এবার আর সেই সুযোগ দেয়া হবে না, আপনাদের পতন কাছাকাছি।'
সারাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এসবি পুলিশের নজরদারিতে এমন এক রিপোর্টের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, 'রাঙ্গামাটি জেলার এসবি পুলিশের রিপোর্ট দেখলাম, সেই রিপোর্টে বলা হচ্ছে বিরোধী দলের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিরোধী দলের নেতাদের তালিকা সরকারকে জমা দিতে, কারা বিরোধী দলের সক্রিয় এবং অর্থের যোগানদাতা- এসব রিপোর্ট জমা দেয়া কি পুলিশের রাষ্ট্রীয় কাজ? আমরাও বলে দিলাম, যদি এসব তালিকা থেকে আমাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়, আমরাও রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়বো, জনগণকে সাথে নিয়ে পতন ঘটিয়ে ছাড়বো।'
এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না, কমিশন ৮ হাজার কোটি টাকার ইভিএম কিনে জনগণের রাষ্ট্রীয় টাকার অপচয় করছে বলেও কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা আব্বাস।
'২০১৪ এবং '১৮ সালের মতো নির্বাচন শেখ হাসিনা আর করতে পারবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সেই চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশন ভবনের একটা ইটও থাকবে না, শেখ হাসিনার একজন এমপির বাড়িতেও এবার ইট থাকবে না,' বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান।
পুলিশের উদ্দেশে আমান বলেন, 'বাংলাদেশের প্রতিটি থানা, জেলায় পুলিশের উপর আমরা নজরদারি করছি, পুলিশ কেমন ব্যবহার করছে আমাাদের সাথে- তা মনিটরিং করছি আমরা। সবকিছু লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।'
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম বলেন, 'যদি শেখ হাসিনা ঘোষণা দেয় তিনি পদত্যাগ করবেন, তবেই আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে। আর আওয়ামী লীগ যদি আন্দোলনে বাধা দেয়, হামলা করে, তাহলে আমরাই ঘোষণা দিয়ে ঢাকা শহর থেকে আওয়ামী লীগ খেদাও আন্দোলন শুরু করবো।'
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুল আওয়াল মিন্টু, শামসুল হক শিমুল বিশ্বাস, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, তাবিথ আউয়াল, সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।