ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ তৈরী করবে নির্বাচন কমিশন
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ তৈরী করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর এই তথ্য জানান।
তবে অ্যাপ তৈরির বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে যা কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে বলে জানান তিনি।
ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করে আট ধরণের তথ্য পাওয়া যাবে।
ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করে কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, 'ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ তৈরি করতে চাচ্ছি। এটা আমরা এবং নাগরিকরাও ব্যবহার করতে পারবে। এতে কারো ভোট কোন কেন্দ্রে, প্রার্থী কারা, নির্বাচনী এলাকার ম্যাপ, কোথায় কত ভোট পড়ল ও তার গ্রাফ, ফিগার; কোন প্রার্থী কোথায় এগিয়ে থাকলো; সেগুলো থাকবে। আট ধরণের তথ্য পাওয়া যাবে। কে জিতল সাথে সাথে জানতে পারবে। এটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত, কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।'
এজন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'তারা যাচাই করে মতামত দেবে।'
'নীতিগত সিদ্ধান্ত তো এখনো হয়নি। জনশুমারির চূড়ান্ত রিপোর্ট পেলে বসবো। কিছু কিছু জায়গায় প্রশাসনিক পরিবর্তন হয়েছে। সেগুলো নিয়ে বসতে হবে।'
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা আছে দাবি করে এই কমিশনার বলেন, 'ইভিএমে ওভাররাইট করার সুযোগ নেই। এখানে ওভাররাইটের বিষয় নেই। কারো আঙ্গুলের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তার আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। তার আগে তার পরিচিতি এনাআইডি নম্বর দিয়ে সনাক্ত করা হবে। অথচ টক শোতে বলছেন ওভাররাইট করা যায়।'
'অনেকে বলছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এটাকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারেন। কিন্তু আপনারা এসে দেখেন, যে ইভিএম চাইবেন আপনাদের সেটাই পরীক্ষা করতে দেবো, দেশে বিদেশের এক্সপার্ট নিয়ে আসেন, দেখেন। আবার বলা হয়, মামলা হলে কিসের ভিত্তিতে হবে। ভিপি ট্রেইল তো নেই। আমাদের ইভিএমে এর চেয়ে ভাল ব্যবস্থা আছে। সেখানে এক বছর পর্যন্ত সিলগালা অবস্থায় থাকবে। এখানে থেকে কোন মার্কায়, কখন ভোট পড়েছে, কত ভোট পড়েছে সব প্রিন্ট করা যাবে।'
ইভিএমে ভোটাররা বিশ্বাস করে জানিয়ে তিনি বলেন,' কোথাও দেখেছেন এটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে, মিছিল করতে। তারা তো ইভিএম দেখেনইনি। যারা লিখছেন তারা তো ইভিএম দেখেনইনি, শুনেনওনি। তারপরও লিখে ফেলছেন।'
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ইভিএম ব্যবহার করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা পারলে ৩০০ আসনেই করতাম। ওই বললাম টাকা নাই। আবার ট্রেনিং সম্পন্ন করতে পারবো। আমরা যদি আরো দুই বছর আগে আসতাম তাহলে ৩০০ আসনে করতাম।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের টার্গেট সুষ্ঠু নির্বাচন করা।'
'রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তো কথা বলতে পারিনি। একটি বড় দল, তার সঙ্গে আরো চারটি দল সরাসরি চেয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে আরো সবমিলিয়ে ১৭টি দল চাচ্ছে। তবু বলা হচ্ছে ইভিএম নিয়ে মতামত পাল্টে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা লিখলেন তারা কি প্রমাণ করতে পেরেছেন?'
ইভিএমে প্রাথমিক ব্যয় বেশি জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, 'একটা ব্যালট কিন্তু ছাপাতে হয়, ক্যারি করতে হয়, প্রচুর খরচ আছে। ইভিএমে একবার খরচ হয়। এরপর এটা কিন্তু আমরা নানা নির্বাচনে ব্যবহার করি। ওই মামলা করার জন্য যে সময় থাকে, ওই সময় পর্যন্ত আমরা ওই ইভিএমটা রেখে দিই। সেই সময় শেষ হলেই কেবল আরেকটা নির্বাচনে ওই ইভিএমটা ব্যবহার করি। ইভিএমে লাইফ টাইম ২০ বছর পর্যন্ত আছে। এটা তো কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও ব্যবহার করছি। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেছি। এই কমিশন আসার পর একটা নির্বাচনও ব্যালটে করিনি।'
এই কমিশনার আরও বলেন, '১২ কোটি ভোটারের পরিপূর্ণ আস্থা আছে। হয়তো রাজনৈতিক কৌশল আছে। তবে তাদেরও অন্তরে আছে, মুখে নেই। কারণ অনেক দলই বিপক্ষে কথা বলছে, কিন্তু আমাদের কাছে এসে পক্ষে বলেছেন। একটি দলের একজন মাননীয় সংসদ সদস্য আমাদের কাছে এসে লিখিত দরখাস্ত করেছেন তার এলাকায় ইভিএম দেওয়া জন্য। কাজেই এটা অন্তরে আছে, উনারা ইভিএম বিশ্বাস করেন।'
'ইভিএমের ভোটে সবাই নির্বাচনে আসবে। ২০২৩ বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, তাতে সকল দল অংশগ্রহণ করবে', বলে আশাবাদী এই কমিশনার।
এই কমিশনার বলেন, '৩৯টি দলই যে আছে, তারা সকলেই আসবে বলে আশা করি। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি মনে করে অন্য দলের সঙ্গে নির্বাচন করবে অথবা অন্য একটি দলকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করবেন না, এমনটাও তো হতে পারে। আমরা অবশ্যই ভোটের পরিবেশ তৈরি করবো। আমাদের ভেতরে ও বাহিরে এক। আলাদা নেই কিছু। রোডম্যাপে আমর আমাদের চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবেলার কথা উল্লেখ করেছি। কোনো কমিশন কি এর আগে তা করেছে?'
'ইভিএম ব্যবহারের কারণে কোনো দল নির্বাচন বয়কট করবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি।'