ছয় জেলায় ৯ বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের চার বছর পার, শেষ হয়নি একটিরও কাজ
দেশের ছয় জেলায় ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়ার চার বছর পার হলেও জমি অধিগ্রহণ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ পর্যন্ত একটিও বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এরমধ্যে ৩টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। ২০১৮ সালের প্রকল্পটির প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। পরে তা আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এরপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদন পায় নয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প। ৪৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির অধীনে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় শহরে দুটি করে, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে ও জয়পুরহাটে একটি করে এবং সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কথা রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে থাকবে আধুনিক ভৌত অবকাঠামো সুবিধা ও যুগোপযোগী শিক্ষা সামগ্রী।
বিভাগীয় শহরের ৭টি বিদ্যালয় হবে ১০ তলাবিশিষ্ট এবং জেলা-উপজেলা শহরের ২টি হবে ৬ তলাবিশিষ্ট। পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি আইসিটি ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, মাল্টিপারপাস হল রুম, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, অফিস কক্ষ, শিক্ষক কমনরুম, নামাজের কক্ষ, দর্শনার্থী কক্ষ, বিএনসিসি, গার্লস গাইড কক্ষ, প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষ, মিড ডে মিল কক্ষ ও সেমিনার কক্ষ থাকবে বিদ্যালয়গুলোতে। এছাড়া ইন্টানেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, বই-পুস্তক, খেলাধুলার সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র সুবিধার কথাও রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরের দুটি বিদ্যালয়ের জমি নির্ধারণ করতেই দুই বছর লেগে গেছে। এই শহরে বর্তমানে মোট ১০টি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। শহরের মানুষের সংখ্যা বাড়লেও দীর্ঘ ৫০ বছরে নতুন কোন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি। তবে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়কে গত বছর সরকারি ঘোষণা করা হয়। বাণিজ্যিক নগরী হওয়ায় এখানে জমির মূল্য চওড়া। বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পের জন্য অন্তত ২ একর জমির প্রয়োজন। একসঙ্গে জমি না পাওয়ায় শহরের দক্ষিণের শেষ প্রান্ত পতেঙ্গায়ই দুটি বিদ্যালয় নির্মাণের জমি নির্ধারণ করা হয়। অথচ শহরের উত্তর দিকের বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, অক্সিজেন এলাকায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। এই দুটি বিদ্যালয়ের মধ্যে একটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং আরেকটি দরপত্র প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
রাজশাহী শহরে দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য বোয়ালিয়ার ছোট বনগ্রাম এবং বড় বনগ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটির কাজ শুরু হয়েছে। আরেকটির পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই শহরে বর্তমানে মোট ৬টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে, যা স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত। এরপর মানুষ বাড়লেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাড়েনি। তবে গত বছর দুটি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজকে সরকারি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া জয়পুরহাটের বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাই পর্যন্ত হয়েছে। এই জেলায় মোট ৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
রংপুর শহরের কামালকাস্তা এবং উত্তম এলাকায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটি স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। আরেকটির দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে এই শহরে মাত্র দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যা স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ময়মনসিংহ শহরের ঢাকা বাইপাস এলাকায় জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। এই শহরে মোট ৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এখানেও স্বাধীনতার পর কোন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি। এছাড়া শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভেতরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে শুধু একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নতুন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
নয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রায়হানা তসলিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি অনেক কঠিন। সেখানে অনেক ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিও রয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ অনেক ধরণের অনুমতি লাগে। এসব কারণে দেরি হয়েছে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩৫-৪০ শতাংশ হলেও বাস্তব অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে না হয়তো। আরো এক বছর বেশি সময় লাগতে পারে।"