আ. লীগের জয় চেয়ে রিটার্নিং অফিসারের মোনাজাত-বক্তৃতা!

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে তার বিজয় কামনা করে দলীয় নেতাদের সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ সময় তিনি প্রার্থীকে পাশে বসিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসেন সে জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে বক্তৃতাও দেন।
বৃহস্পতিবার এটিএম পেয়ারুল ইসলাম শ'খানেক নেতাকর্মী নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এসময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক সম্প্রীতি সভা চলছিল। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শফর আলী প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের বিজয় কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকেও হাত তুলে অংশ নিতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে।
এরপর জেলা প্রশাসক বাম পাশে প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম এবং ডানপাশে সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে বসিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, 'জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এটিএম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করলাম। আজ যেন একটি সুযোগ পেয়েছি, এখানে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের সকল পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত আছেন, কিছু কথা বলি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি, আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চলছে।'
'আপনারা জানেন, আড়াই বছরের মতো আমরা করোনায় পার করেছি, লকডাউন গেছে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সমস্ত বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। ইউরোপ-আমেরিকা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের রপ্তানি তেমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আমাদের দেশের অর্থনীতিও এখনও সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এরপরও যারা সবসময় ইস্যু খোঁজে, তারা ইস্যু খুঁজবেই।'
এরপর জেলা প্রশাসক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, 'আগামী বছর বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এই নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তির হাতে থাকবে নাকি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির হাতে যাবে।'
'আমি মনে করি যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যদি থাকে, তাহলে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বলি, বিএনপি বলি, জামায়াত বলি, সবাই নিরাপদ থাকবে। আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।'
আওয়ামী লীগ নেতাদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কমানোরও তাগিদ দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, 'নিজেদের মধ্যে ছোটখাট ভুল বোঝাবুঝি যদি থাকে, সেগুলোর ঊর্ধ্বে উঠে যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা যাতে স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির হাতে থাকে, সে জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করা উচিৎ। জাতির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সবাই একসঙ্গে সবাই কাজ করব, বাংলাদেশকে রক্ষা করব।'
বৃহস্পতিবার ছিল জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমার শেষদিন ছিল। ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সনাক–টিআইবির চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, 'একজন রিটার্নিং অফিসার হিসেবে এটি উনি নির্বাচনী আইনের সম্পূর্ণ বিরোধী কাজ করেছেন। এটি শুধু আচরণবিধি লঙ্ঘনই নয়, নির্বাচনী আইনেরও বরখেলাপ করেছেন। ওনাকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত। চট্টগ্রাম থেকেই অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া উচিত। আমি আশা করব, নির্বাচন কমিশন বিষয়টি আমলে নেবে এবং উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'
এ বিষয়ে জানতে জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।