আমলাতান্ত্রিক রাজউক দিয়ে ড্যাপ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়: আইপিডি
মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) আমলাতান্ত্রিক রাজউক দিয়ে বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছে ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
সংগঠনটি মনে করছে ঢাকা শহরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উদ্যোগগুলোর কার্যকর সমন্বয়ের জন্য ড্যাপে প্রস্তাবিত 'মহানগর সরকার' প্রতিষ্ঠা ব্যতীত ড্যাপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
বুধবার মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে রাজধানীর বনানীতে আয়োজিত এক নগর সংলাপে একথা উঠে আসে।
আইপিডি আয়োজিত নগর সংলাপের মূল প্রবন্ধে সংগঠনটির পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড.আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, 'চিফ কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে সিটি করপোরেশনের মেয়র থেকে শুরু করে অন্যান্য সেবা সংস্থার প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাবনা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় দেওয়া আছে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য উপদেষ্টামণ্ডলী ও নির্বাহী কমিটির কথা বলা হয়েছে। এগুলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে হবে না।'
ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, 'রাজউকের বিদ্যমান কাঠামোকে ঢেলে সাজানো ব্যতিরেকে এগুলোর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা দলিলটি একটি মাল্টি সেকটরাল প্ল্যান। ফলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সফলতা নির্ভর করবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে সংশিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থা কতটুকু আন্তরিকতার সাথে প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারসমূহ যথা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসমূহের যথাযথ ভূমিকা পালন এখানে গুরুত্বপূর্ণ।'
তিনি বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুমোদন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ শাখাকে যথাযথভাবে শক্তিশালী না করা হলে ভূমি ব্যবহার তদারকি, মিশ্র ব্যবহার ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা অনুমোদন, কৃষিভূমি ও বন্যাপ্রবাহ এলাকা সংরক্ষণ– প্রভৃতি অনুষঙ্গগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, এলাকাভিত্তিক অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধাদির বিপরীতে জনঘনত্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন এলাকার জন্য ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর), কাঠাপ্রতি পরিবারের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে যা নগর এলাকার জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
এবারের ড্যাপে সরকারি-বেসরকারি সকলক্ষেত্রেই প্লটভিত্তিক আবাসন প্রকল্পকে নিরুৎসাহিত করে ফ্ল্যাটভিত্তিক ও ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে যা ঢাকা শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নে ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ সব প্রস্তাবনার সফলতা নির্ভর করবে কার্যকর বাস্তবায়নের উপর। কেননা অতীতে দেখা গিয়েছে, পূর্বের পরিকল্পনাসমূহের সঠিক বাস্তবায়ন ও কার্যকর নজরদারির অভাবে অনেক পরিকল্পনারসমূহের সফলতা পাওয়া যায়নি এবং ঢাকা মহানগরী এলাকা ক্রমান্বয়ে বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।
অনুষ্ঠানে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপে প্রস্তাবনাসমূহের সঠিক বাস্তবায়ন করা হলে এই শহরে নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য লক্ষাধিক আবাসিক ইউনিট তৈরি করা সম্ভব হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পরিকল্পনা ও কার্য পরিকল্পনাসমূহ প্রণয়ন করবার উদ্যোগ নেয়া হবে।
একইসাথে বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তা, ভবন নির্মাতা ও আবাসন ব্যবসায়ী, ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট মহলসহ জনসাধারণ ও নাগরিকদের এই পরিকল্পনাকে অনুসরণ করে সকল ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম করবার আন্তরিক আগ্রহ থাকলে সরকারের পক্ষে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজতর হবে বলে মন্তব্য করেন ড্যাপের পরিচালক।
আইপিডি'র পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, নগর পরিকল্পনা এক ধরনের পরিবর্তশীল মিথষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয় বিধায় এবারের ড্যাপে প্রস্তাবিত পরিকল্পনা কৌশলগুলো বাস্তবায়নের সময় লব্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে পরিকল্পনা কৌশলগুলো পরিমার্জন করা যাবে, তবে এক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহকে ড্যাপ বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে।