দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানালেন মোদি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে ভারতে পৌঁছানোর একদিন পর মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) তাকে দেশটির রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে স্বাগত জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও।
শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে সাজানো হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন।
ভারতকে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "ভারত আমাদের বন্ধু। প্রতিবারই ভারতে আসা আমার জন্য আনন্দের। বিশেষ করে আমরা সবসময় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করি। আমাদের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করছি।"
প্রধানমন্ত্রী আজ ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখড়ের সাথে দেখা করবেন। এছাড়া নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি আজ বাণিজ্য, সংযোগ এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করবেন।
মোদীর সাথে তার আসন্ন আলোচনার কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা যোগ করেন, "বন্ধুত্বের মাধ্যমে আপনি যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তাই, আমরা সবসময় সেটাই করি।"
ভারতের রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
সকাল ১০টা বেজে ২১ মিনিট
ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিল্লির রাজঘাটে ভারতের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রধান নেতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধির বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
তার সম্মানে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবতাও পালন করেন তিনি।
পরে প্রধানমন্ত্রী সমাধিস্থলে দর্শনার্থীর বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত একটি স্মৃতিসৌধ রাজঘাট মহাত্মা গান্ধীকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
ফলপ্রসূ আলোচনার আশা করছি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সকাল ৯টা বেজে ৩১ মিনিট
আমাদের প্রধান ফোকাস হলো, আমাদের জনগণের দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনীতির উন্নয়ন। এই সমস্ত ইস্যুতেই আমি মনে করি আমাদের দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে যাতে শুধু ভারত ও বাংলাদেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ ভালো জীবন পেতে পারে। এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
আমি আশা করি, এই সফরে আমাদের মধ্যে একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হবে অর্থনৈতিকভাবে বিকাশ লাভ এবং আমাদের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা- যা আমরা করতে সক্ষম হব।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ইতমধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে দেখা করে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ ও গুরুত্বের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকের পর জয়শঙ্কর টুইট করেন, "আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরে আনন্দিত। আমাদের নেতৃত্বে যারা আছে তাদের মধ্যকার এই উষ্ণ সম্পর্ক প্রতিবেশি দেশের সাথে আমাদের অংশীদারিত্বের সাক্ষ্য দেয়।"
বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ বলেছে, যেসব প্রকল্প বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের জনগণের উন্নতি নিশ্চিত করবে সেসব প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। দেশে কিছু কিছু প্রকল্প দেরিতে হচ্ছে, এ বিষয়ে তিনি জানেন বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র সচিব।
গ্রিড সংযোগের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নেপাল এবং ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া, ভারতের এক অংশ থেকে অন্য অংশে বিদ্যুৎ পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা ও মোদি উভয়েই এই বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা এই ধরনের ক্রয় নিষ্পত্তি করার জন্য লেনদেনের কোন মাধ্যম বেছে নেওয়া হবে সে বিষয়টিও দেখছেন। "ভারত থেকে আমরা আমাদের অনুকূল শর্তাবলীসহ তাদের উদ্বৃত্ত জ্বালানি (যদি থাকে) পেতে পারি। আমরা অবশ্যই তা বিবেচনা করব।"
শেখ হাসিনা ভারতে চারদিনের সফরে নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর পরই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিরোধটি আবারো সামনে এসেছে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন, রেলওয়েতে প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি সহযোগিতা, বিজ্ঞান, মহাকাশ ও মিডিয়া সহযোগিতার বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফর করেন। দিল্লি এবং ঢাকাসহ বিশ্বের ২০টি রাজধানীতে মৈত্রী দিবস উদযাপন করা হয় সেসময়। ২০১৫ সাল থেকে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী ১২ বার বৈঠক করেছেন।
ভারত ও বাংলাদেশকে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি সংযোগ উদ্যোগ পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য নতুন মডেল তৈরি করতে চেয়েছে। দুই দেশের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ শীঘ্রই পুনরায় চালু হবে। আশা করা হচ্ছে, আগরতলা ও চট্টগ্রাম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আকাশপথেও সংযুক্ত হবে।
ভারতের 'নেইবারহুড ফার্স্ট' নীতির অধীনে বাংলাদেশ তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। নিরাপত্তা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন ও সংযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, নদী এবং সামুদ্রিক বিষয়াদিসহ সব ক্ষেত্রেই এ সহযোগিতা বিস্তৃত।
বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। গত পাঁচ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮ বিলিয়ন ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে ৯.৬৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬.১৫ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায় ভারতের জন্য চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
- প্রতিবেদনটি তৈরিতে হিন্দুস্তান টাইমস, এএনআই এবং দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে