ধীরগতিতে চলছে ই-কমার্স জালিয়াতি মামলার তদন্ত
বর্তমানে অন্তত ২৫টি কোম্পানির বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি ই-কমার্স জালিয়াতির মামলার তদন্ত চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। অন্যদিকে, নতুন নতুন কেলেঙ্কারির সংখ্যাও বেড়েই চলেছে।
ইকমার্স সাইটে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারিত হওয়ার পর বিভিন্ন থানা এবং আদালতে মামলা করেন গ্রাহকরা। গ্রাহকদের করা এসব মামলার একটি বড় অংশের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)।
পুলিশের এই তদন্ত সংস্থা এখন পর্যন্ত ৪২টি মামলা পেলেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি একটি মামলারও।
সংস্থাটির সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল এসপি আজাদ রহমান টিবিএসকে বলেন, "ই-কমার্সে প্রতারিত হয়ে গ্রাহক মামলা করেছে এমন ৪২টি মামলা আমরা তদন্ত করছি। তবে এই ৪২ মামলার কোনটির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। কয়েকটি মামলার চার্জশিট খুব দ্রুত দেওয়া হবে।"
তবে বিভিন্ন সময় আরও মামলার তদন্ত সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে। এসব মামলার সঠিক তথ্য সিআইডি সংরক্ষণ করেনি বলে সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ই-কমার্সের ৫২টি মামলা দায়ের হয়। প্রতারিত গ্রাহকের করা ৫২টি মামলা থেকে ৩৩টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হয়।
ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, সিআইডির কাছে তদন্তাধীন মামলা গুলোর মধ্যে রয়েছে, ইঅরেঞ্জের ১৭ টি, ইভ্যালির ৪টি, দালাল প্লাসের ২টি, কিউকমের ৩টি, ধামাকার ২টি, নেওলাইফ, আনন্দবাজার, সিরাজগঞ্জ শপ, রিং আইডি ও থলে ডটকমের একটি করে মামলা।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রতারিত গ্রাহকেরা থানা ও আদালতে মামলা দায়েরের পর অধিকাংশ মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
এছাড়া পুলিশের আরেকটি তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মোট ৩৮টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায়। ইতোমধ্যে তারা ১১টির বেশি মামলার তদন্ত শেষ করেছে।
পিবিআই সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল এসপি আবু ইউসুফ টিবিএসকে বলেন, "আমাদের তদন্তাধীন অধিকাংশ মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষের দিকে, খুব শীগ্রই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।"
ই-কমার্সের অর্থপাচারের অনুসন্ধান
গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সন্দেহজনক তালিকা করে কাজ শুরু করে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
অন্তত ৩৫ প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে অনুসন্ধান শুরুর প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র ৯টি ইকমার্সের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে তারা। এই ৯টির তদন্ত শুরু করেও মাত্র একটি ই-কমার্সের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করতে পেরেছে তারা।
সিআইডির ফিন্যন্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির টিবিএসকে বলেন, "ই-কমার্সের বিরুদ্ধে আমাদের অনুসন্ধান চলছে। যে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই অর্থপাচার আইনে মামলা করে তদন্ত করা হচ্ছে।"
"সবশেষ দালাল প্লাসের বিরুদ্ধে আমরা ৪১ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছি। এছাড়া আমাদের তদন্তাধীন মামলাগুলোর কাজ অনেকটা এগিয়েছে। দ্রুতই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে," বলেন তিনি।
অর্থপাচার আইনে যেসব ই-কমার্সের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তার মধ্যে রয়েছে ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, রিংআইডি, টোয়েন্টিফোর টিকিট, আনন্দের বাজার, সিরাজগঞ্জ শপ, আকাশনীল ডটকম, এবং দালাল প্লাস। চার্জশিট দেয়া হয়েছে শুধু এসপিসি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে।
তদন্তে ধীরগতির কারণে মামলা করে না গ্রাহক
সম্প্রতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রিয়শপ ডটকমের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালিয়েছে পুলিশ। তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে টাকা দিয়ে পণ্য পাননি এমন গ্রাহকের সংখ্যা অনেক। গ্রাহকদের টাকা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর আংশিক টাকা রিফান্ড করে তারা।
তবে কোনো গ্রহক এ কারণে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেননি। কিংবা পুরো টাকা ফেরতের চেষ্টাও করেনি অধিকাংশ গ্রাহক।
এভাবে প্রতারিত হয়েছেন এমন একাধিক গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করে টিবিএস। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানায়, মামলা করলে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হবে এরপর লম্বা সময় ধরে তদন্ত এবং আইনি প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কিনা সেটা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে যায়। এরচেয়ে আংশিক টাকা ফেরত পাওয়াই তাদের জন্য ভালো।
এভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান আইনের আওতায় না আসায় ছোট ছোট বহু প্রতারণার ঘটনা ঘটছে ই-কমার্সের মাধ্যমে। গত মাসে নিডল বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে গ্রাহকেরা।
তারা জানিয়েছে কয়েকমাস আগে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। তাদের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছে নিডল নামে এই ই-কমার্সটি।
এছাড়া কিছুদিন আগে ইনসাফ সেভেন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ অত্মসাতের খবর পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্সের নামে প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়েছে বলে জানা গেছে।
ইনসাফ সেভেনের প্রাক্তন কর্মচারীদের মতে, আত্মসাতের অর্থের বড় একটি অংশ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। তবে এখনো এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।
এরমধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকারে কিছু গ্রাহক অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।