গত বছর দেশে আগত পর্যটকদের থেকে আয় বেড়েছে ৫৯%

গত এক বছরে বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ে দেশে আগত পর্যটকদের ভূমিকা বেড়েছে ৫৯% (আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়)। দক্ষিণ এশিয়ায় টিকাদান কর্মসূচি আর সফলভাবে মহামারি মোকাবিলা এর কারণ।
ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরে দেশে আগত পর্যটকদের মাধ্যমে আয় হয়েছে ২,২৭৯ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা ২০২০ সালে (১০ মাস) ছিল ১,১৯৬ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত কাজের সূত্রে পর্যটন, বাংলাদশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক আর মানবাধিকার কাজে সংশ্লিষ্টদের জন্য এ আয় বেড়েছে।
বেঙ্গল ট্যুরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ২০২০ ও ২০২১ সালে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে পর্যটকদের বাংলাদেশে আসা একদমই কমে যায়। যারা বাংলাদেশে এসেছেন, তারা টুরিস্ট ভিসায় দেশে কাজ করেন, দেশের বাসিন্দা না এমন বাংলাদেশি এবং কাজের উদ্দেশ্যে আসা পর্যটক।
"গত বছর আমার কোম্পানির মাধ্যমে ১০ জন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসেন। মহামারির আগে এ সংখ্যা ছিল ৫০০'র ওপরে", যোগ করেন তিনি।
২০২১ সালের পর আর আন্তর্জাতিক পর্যটকদের তথ্য হালনাগাদ করেনি বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড।
নিয়মিত পর্যটক আগমনের তথ্য হালনাগাদ করতে এখন নতুন সফটওয়্যার তৈরির কথা ভাবছে পর্যটন বোর্ড। ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালেয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সহযোগিতায় এটি বানানোর কথা চলছে বলে জানান পর্যটন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
২০২০ সালে এ খাতে ৩৫% নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়।
দেশের রাজস্ব আয়ে ২০১৯ সালে এ খাতের আয় ছিল ১,৮৬০ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ২,৯৫০ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ২,৪৪৫ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ৮৬৬ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ৬৯৬ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে ৫২৮ কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালে ৬২৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পর্যটক বোর্ডের সহকারি পরিচালক মো মাজহারুল ইসলাম টিবিএস-কে বলেন, "শুধু পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেই আয় বাড়ে না। বরং দেখতে হয়, কোন দেশের পর্যটক আসছে। যেমন- ভারতীয় পর্যটক আমেরিকান পর্যটকের মতো বেশি খরচ করেন না"।
বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এর প্রতিবেশি দেশগুলোর মতো জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হয়ে উঠতে পারেনি। দুর্বল পর্যটন ব্যবস্থাপনা, এয়ারপোর্ট অবকাঠামো, জটিল ভিসা নীতি, সামাজিক বাধা-নিষেধ ও আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থার অভাব এর জন্য দায়ী বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
২০১৯ সালে দেশে পর্যটক আসে ৩ লাখ, স্বাধীনতার পর দেশের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৮ সালে এসেছিল ২.৪৮ লাখ, ২০১৭ সালে ২.২ লাখ, ২০১৬ সালে ১.৬৯ লাখ ও ২০১৫ সালে ১.১৮ লাখ।
পর্যটন বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে দেশে ভারতীয় পর্যটক আসেন ২৭০,০২৪ জন, অর্থাৎ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মোট পর্যটকের ৮৯%।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ শাখার জেনারেল সেক্রেটারি তৌফিক রহমান টিবিএস-কে বলেন, "কোভিডের আগে বাংলাদেশে শুধু ঘুরতেই আসতেন ৩০-৪০ হাজার বিদেশি পর্যটক"।
ঢাকায় ভারতীয় কূটনীতিক ও দিল্লি, গুয়াহাটি ও কোলকাতায় বাংলাদেশি কূটনীতিকরা বলছেন, পদ্মা সেতু খুলে যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতে ভারতীয় ও নেপালি পর্যটকদের বাংলাদেশে আগমন ২৫-৫০% বাড়তে পারে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আকবারুদ্দিন আহমদ বলেন, "পদ্মা সেতু দিয়ে বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী হবে ভারতীয় ও নেপালি পর্যটকরা। সরকার ধাপে ধাপে উন্নত সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানীর সাথে সংযোগের কথাও ভাবছে"।
"মংলা বন্দরে কাজ করছে সরকার, চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।"
দেশে গত ১৫-২০ বছরে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কটেজ, হোটেল ও মোটেল নির্মাণের সাথে সাথে দেশের স্থানীয় পর্যটন খাতেরও বিকাশ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড এখন আগামী ২৫ বছরের মধ্যে দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে।